যে কোনো গাছের দিকে অবাক তাকিয়ে থাকি। কী দারুন সরলতা নিয়ে তারা বড় হয়। বড় হয়ে আরও বড় হয়। বড় হতে তাদের মাস্টারমশাই লাগে না। চক ডাস্টার হোয়াইটবোর্ড কিচ্ছু কিচ্ছু না!
স্কুলে যাবার পথে গাছেদের ইভটিজিংয়ে পড়তে হয়না। গাদাগাদা মুখস্থ করার কোনো রেওয়াজরীতি বৃক্ষমহলে চালু নেই। পরিবর্তে তাদের প্রসারিত শাখা সবসময় পাখীদের বসার জন্য অবারিত রাখতে হয়। যে যতো প্রসারিত শাখা নিয়ে দাঁড়াতে পারে, বৃক্ষসমাজে তার মূল্যায়ন ততো বেশি। পাখী ও পতঙ্গকে আকৃষ্ট করতে গাছেদের তাই কতো আয়োজন! গাছেদের সিলেবাসে বৃষ্টিপাত, সূর্যালোক, বায়ুবেগ আছে। রাষ্ট্রচিন্তা নেই – রাষ্ট্রের ধারণাও নেই। তাই গাছেদের পিএইচডি লাগেনা।
গাছেদের সিলেবাসে মানুষদের নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ অধ্যায় রয়েছে: ‘ক্ষতিকর প্রানীদের হাত থেকে টিকে থাকার কৌশল’ নামে। শিশুবৃক্ষ প্রথমেই সেটা পড়ে নেয়। গাছেরা ‘কুড়ুল দিবস’ পালন করে। আর ভিন্ন তালিকায় রাখে সেইসব গাছেদের নাম, যারা কুড়ুলের হাতল হবার জন্য ঘষেমেজে নিজেদের চকচকে রেখেছ!
আমার কিন্তু ছিলোনা কেউ, কোনোখানে
ওঁৎ পাতিনি, জানো?
আমার সাথে দেখা হয়নি কারো।
কিংবা দেখা হতেও পারে, মুখ মনে নেই
কার ইশারায়, উপেক্ষাতে
হুহু জ্বরে তপ্ত হলাম
সিঁড়ির 'পড়ে বসে রইলাম সর্বহারা
মানো বা না মানো-
আমি একাই ছিলাম, আছি আগাগোড়া
মাঝেমধ্যে দু' একটা হাইফেন-
দুজন মানুষ জোড়ার ছলে দ্বন্দ্ব সাজালেন!
সেসব বহু পুরোনো সুর। ওই সুরে কি
গান করা যায়? গানও
খুঁজে বেড়ায় নিত্যনতুন ছন্দ-ভাষা
মগ্ন এলোচুল-
শাড়ীর পাড়ে বিঁধে থাকুক চোরকাঁটা তীর
কাঞ্জিপুরম হাসিতে মশগুল।
তারপর নেকড়ের দল
দেয়াল টপকে ঢুকে গেলো
সাদা বাড়িটার
মনোহর চাতালে। যেখানে সবুজ ঘাস,
মাধবীলতার আশকারায়
টুনটুনি সংসার পেতেছে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই
ওরা ঝাঝরা করে দিলো
নিস্তব্ধতা। প্রতিবাদের ব্যুহ
তৈরি হবার আগেই
বেয়াড়া বুটের আস্ফালনে
সারিসারি চন্দ্রমল্লিকা
নুয়ে পড়লো।
জান্তব আনন্দে ভারী ভারী বুলডোজার
পিচরাস্তায় গাঢ় দাগ ফেলে
ফিরে যাবার পরও
একটি পাখি পড়ে ছিলো
সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে
অনেকক্ষণ,
রক্তাক্ত,
একা!
১২ আগস্ট ২০২১
ধরো বুঁচি, তোমার আমার এখনো বিয়েশাদী হয়নি কিন্তু হবো হবো করছে-
রিকশায় হুড তুলে আমরা দুজন ঘুরে বেড়াচ্ছি
এদিক সেদিক পার্কে কিংবা রেস্টুরেন্টে-
জনগনের চোখের সামনে বরবউয়ের মতো
একজন আরএকজনের মুখে
তুলে দিচ্ছি আধিখ্যেতার গ্রাস।
চুড়ি কিনতে হাত মুঠোয় নিয়ে
পড়িয়ে দিচ্ছি হাতে-
বুঁচি, আমার মনে হয়
আমাদের এই জিবন ভালো।
এই জিবন জিবনের চেয়ে মরনোত্তর!
তুমি কী বলো বুঁচি, আমরা কি আবার জন্মাবো?
খড়ের পুতুলের ভেতর থেকে
সেদিন তোমাকে আমি
টেনে বার করলাম, আর রাতারাতি
পৃথিবীটা ভীষণরকম
নতুন ভাসানে ভরে উঠলো!
মানুষেরা যার যতো দেনাপাওনা ছিলো
সব শোধ করে
নতুন মানুষ হয়ে গেলো। গাছপালা
অবশিষ্ট পাতায় বল্কলে
দিব্যি গজিয়ে গেলো নতুন মানুষ!
মোড়ে মোড়ে খুলে গেলো ট্রাফিক জ্যাম।
একবিন্দু বৃষ্টিতে
বিশ্বরূপ দেখে ফিরলেন অবসন্ন চাকুরিজীবী
যেদিন তুমি প্রথম চুমু পাঠাবে!
খুন হয়ে যাবার পর আমি তোমার দিকে
তাকালাম; পিরামিডের পাশে-
ঝিকিঝিকি আগুনের সূর্যটা ম্লান করে
তোমার নিঃসঙ্গ সৌষ্ঠব
অহেতুক আস্ফালনে
আমাকে বাঘের মতো ফালাফালা
করে দিলো!
চেয়ে দেখলাম, পুরোনো পৃথিবীটা
নগন্য তামার পয়সার মতো নিঃশব্দে
অস্ত যাচ্ছে তোমার পেছনে!
৯ জুন, ২০২১
সেন্ট্রাল রোড, ঢাকা