তুহিন সমদ্দার

কুমীরের মাথা

কুমীরের মাথার ভেতর হাত ঢোকানোর যে কী শিহরণ- তা শৈশবেই টের পেয়েছিলাম! এই বক্তব্য কিছুটা প্রক্ষিপ্ত- কারণ আদতে তা ছিলো কুমীরের মাথার কঙ্কাল বা খুলি। এবং শহরবাসী হয়েও আমাদের এমন সুযোগ পাবার কথা নয়। কেননা, আমাদের জন্মের বহু আগেই কীর্তনখোলা নদীর কুমীর লোপাট হয়ে গেছে- ছিলো কতগুলো শুশুক। মামাবাড়ী যাবার সময় নৌকার গলুইয়ে বসে ওদের হুশ করে ভেসে উঠে মিলিয়ে যাওয়া দেখে দেখে গুনতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু কোনদিনই গুনে মেলাতে পারতাম না, কারণ সংখ্যায় ওরা ছিলো প্রচুর। একসাথে তিনচারটা কালো তেলতেলে শরীর নিয়ে লাফিয়ে উঠেই মিলিয়ে যেত। নৌকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে ওরা আসতো। মায়ের যন্ত্রণায় শান্তিমতো উপভোগ করার জো ছিলো না। তিনি নদীর পাড়ের মেয়ে হয়েও নিজে সাঁতার জানতেন না বলে নদীতে ডুবে যাবার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে নৌকার ভেতর বসে থাকতেন। আমাদেরকেও আটকে রাখতেন। এহেন নিয়ন্ত্রিত শৈশবে একটি কুমীরের মাথা নিয়ে ‘গবেষণা’ করতে পারার সুযোগ নেহাত কম নয়। খেলাঘরের প্রদর্শনীতে এটা রাখা হয়েছিলো- আর আমার উপর সেটা ডেমনেস্ট্রেট করার ভার পরেছিলো। আমার শৈশব-কৈশোরকালের প্রায় পুরোটা জুড়ে আছে খেলাঘর!শিশুদের ভেতরে সাংস্কৃতিক বিকাশের সাথে সাথে নিয়ম, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্ব তৈরি করতে এমন সংগঠনের বিপুল ভূমিকা ছিলো। নিয়মিত প্যারেড-পিটি, খেলাধুলা, গানবাজনার পাশাপাশি বছরান্তে একটি সম্মেলনের জন্য আমরা মুখিয়ে থাকতাম। দুই বা তিনদিনব্যাপী লাগাতার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ‘ভাইবোনদের’ হাতের কাজের প্রদর্শনী করা হতো পাবলিক স্কুলের ঘরগুলো পুরোটা ব্যবহার করে। চেষ্টা করা হতো প্রতি বছরেই নতুন কিছু উপকরণ তৈরির। সম্ভবত আশি সালের কথা- সম্মেলনের আগের দিন শেখর দা কোত্থেকে যেন ঐ কুমীরের মাথাটা নিয়ে হাজির। স্থানীয় জালিয়াবাড়ীতে তাঁর বাড়ীর পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে খাল- যেখানে চারপাঁচটা পোষা উদ্বিড়াল সারাক্ষণ ডুবোডুবিতে ব্যস্ত থাকতো! শেখরদা নাকি খালে স্নান করতে নেমে ঐ কঙ্কালটা পেয়েছিলেন। এখন বুঝি, ওটা ছিলো একটা এলিগেটর বা মেছো কুমীর- নাকের ডগাটা অনেক লম্বা। কঙ্কালের ভেতর হাত ঢুকিয়ে আমরা ওর অবশিষ্ট নড়বড়ে কয়েকটা দাঁত নিয়ে মজা করতাম। ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলো ঐ কুমীরের মাথাটা। লোকজন ওটার পাশে ভিড় করে বিভিন্ন সম্ভাবনা ব্যক্ত করতেন। তৎকালীন নারীনেত্রী শ্রদ্ধেয়া মনোরমা বসু মাসীমা তাঁর বক্তৃতার শেষে এজন্য শেখরদাকে একশত টাকা বকশিস দিয়েছিলেন, এটা মনে আছে। কিন্তু এরপর কুমীরের মাথাটা নিয়ে কী করা হয়েছিলো তা আর জানতে পারিনি। খেলাঘরটিও কয়েকবছর পরে আস্তে আস্তে অকার্যকর সংগঠনে পরিনত হয়ে অবশেষে নেই হয়ে যায়। শত খুঁজেও আমরা এখন আর একটা কুমীরের মাথা জোগাড় করতে পারবো না…!

জিরানি

আমাদের বাসার সামনে ধ্যারধেরে রেইন্ট্রিগাছে গাছে-মৌমাছি ভুল করে বাসা বেঁধেছিলো। ভুল করে বলছি এই কারণে যে ওরা বেশিদিন টিকতে পারেনি। আর সাধারণত এ ক্ষেত্রে যা হয়- বিভিন্ন সুসারিস্টিসন তৈরি হয়ে যায়। মৌমাছির নাকি ভালোমন্দ বিবেচনাবোধ প্রখর। যেখানে তারা বাসা বাঁধে- সেই সংসারের সর্র্বনাশ করে ছাড়ে- এটা আমার মা-জননী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি আশেপাশের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আরো বিস্তারিত জ্ঞান নিলেন। বাড়ীর ঠিকা-কামলা সিরাজমেয়া তাঁর গভীর পর্র্যবেক্ষণশক্তি ব্যবহার করে রায় দিলেন- এগুলা জিরাইন্না পোক্! মানে হলো চলার পথে ট্রানজিট হিসেবে ওরা রেইন্ট্রিগাছে আশ্রয় নিয়েছে- এরপর দেখেশুনে ভালো কোনো ফ্লাট পেলে তাতে উঠে যাবে। তা জিরানো হোক বা স্থায়ী- ওদের কর্র্মকাণ্ড দেখতে কিন্তু বেশ লাগছিলো আমার। বুদ্ধি আছে ওদের। এমন একটা হ্রসি-কারের মত বাঁকানো আর ওঠা-অসম্ভব ডাল ওরা বেছে নিয়েছে- এমন উচ্চতায়- যে সহজে কেউ ওদের টিকির নাগাল পাবে না। আমি ওদের ওড়াউড়ির ব্যস্ততা আর ফুলে ফুলে বিচরণ লক্ষ করতাম। প্রচুর গাঁদাফুল ফুটতো বাসায়। ওরা ফুলে ফুলে আমের মুকুলে ঘুরে মধু নিয়ে জমা করতো। তিনমাস হবার পরেও যখন ওদের জিরানো শেষ হলো না, তখন আর এক বিশেষজ্ঞ তাঁর মতামতে জানালেন- মৌ কাটার সময় হয়েছে। (প্রকাশ থাকে এই যে আমাদের বাড়ীতে এ ধরণের ‘বিশেষজ্ঞ’ ও ‘দক্ষ কাজের লোকের’ অভাব ছিলো না- তারা পারতেন না এমন কোন কাজ নেই!) তো ঐ সময় বাসায় কী যেন রিপেয়ার করার জন্য রাজমিস্ত্রি নেয়া হয়েছে। (মিস্ত্রি আমাদের বাড়ীর কমন আইটেম, সারা বছর কিছু না কিছু পরিবর্র্তন, পরিবর্র্ধন- জোড়াতালি লাগাতার চলতো- এ বিষয়ে অন্যত্র বলবো)। স্বাভাবিকভাবেই মৌমাছি সংক্রান্ত এই আলোচনায় তাঁরা তাঁদের বিশেষজ্ঞ-মতামত দিলেন। এবং এহেন ‘মৌ-ভাঙার’ কাজ যে তারা ক-ত্তো করেছে, তার ইয়ত্তা নেই। মা-জননী ওদের বাখোয়াজে কনভিন্সড! খড় আর আমপাতা বেঁধে একটা নুড়ো বানানো হলো যেটা জ্বালিয়ে ধোঁয়া-সঞ্চার করে মৌমাছিদের তাড়ানো হবে। দেখলেই অকর্র্মন্য মনে হয় এমন একটি লেবারকে এই কাজের জন্য মনোনীত করা হলো। সে লুঙ্গী কাছা দিয়ে, মাথা-মুখ গামছায় বেঁধে হাতে একটা গামলা নিয়ে রেডি। গামলায় করে নাকি পুরো মৌচাকটা একবারে কেটে নিয়ে সে গাছ থেকে নামবে। আর এমন বাঁকানো ডালে চড়া নাকি তার বাঁ হাতকা খেল। তো অবশেষে মৌচাকের চারফুট দুরে থাকতে সে মৌমাছিদের প্রথম এ্যাটাকের সম্মুখীন হয়। জানালা দরজা বন্ধ করে রুদ্ধশ্বাসে বাসার ভেতরে আমরা কোনক্রমে দেখতে পাই- ব্যাটা একহাতে নুড়ো দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছে আর অন্যহাতে ধারালো দা দিয়ে মৌচাকের কিছুটা কাটতে সক্ষম হয়েছে- কিন্তু ব্যপক আক্রমনে যে কোন সময় গাছ থেকে পড়ার উপক্রম। কিন্তু সে পড়লো না। বিনিময়ে মধুর গামলাটা পড়ে গেলো। নিচে একটা নারকেল গাছের চারা ঐ মধুতে স্নান সেরে নিলো! মৌমাছিরা রাগে-দুঃখে গনগন আস্ফালন করছিলো। হারামজাদা- মধু বাদ দিয়ে ওদের কচি কচি ছানাদের কোয়াটারগুলো কেটে নিয়েছে।

পরদিন সকালেই মৌমাছিরা হাওয়া হয়ে গেলো। বাঁকানো ডালে ঝুলে রইলো শুধু হাড়ের মতোন সাদা-মধুহীন- মৌমাছির চাক। অনেকদিন ঝুলে ছিলো- ওদের ঘৃণার প্রতিকল্প হয়ে!

15Ferdoushi Mukti, Avi Chatterjee and 13 others8 Comments4 SharesLikeCommentShare

গোলট্যাক্সি

বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটি পরিচালিত মল-অপসারণের গাড়িগুলির কথা বললে একালে কেউ বিশ্বাস করবে কিনা সন্দেহ। আফসোস হচ্ছে- অনেক চেষ্টা করেও অমন একটি গাড়ির ছবি আমি জোগাড় করতে পারিনি। স্থানীয় মেথরবাড়ীতে সেগুলো থাকতো। একটা দশাসই ড্রামের পেটের কাছে মুখ-কাটা, আর আড়ভাবে জুড়ে দেয়া গরুর গাড়ীর সাথে। এর সঙ্গে থাকতো অদ্ভুত আকারের একটা বালতি। আজীবন দেখেছি বালতির উপরের অংশটা নীচের অংশের থেকে চওড়া হয়। ওদের বালতিটা ছিলো উল্টো। নীচে অনেক প্রশস্ত আর উপরের মুখের দিকটা সরু। দেখে মনে হতো উল্টানো। ছোটবেলায় ঐ গাড়ী অনেক দেখেছি। ঢিমে তালে অত্যন্ত মুড নিয়ে (মুডতো নেবেই, গাড়ীভর্তি গু নিয়ে তো আর হাসতে হাসতে চলাফেরা করা যায় না!) মেথরপট্টির পেইড-পরিচ্ছন্নকর্মীরা ওই গাড়ী চালিয়ে আসতো। এসে ধন্য করতো। কারণ, যাদের ‘সেপটিক ট্যাঙ্ক’ ভরে গেছে- তারা জানে কী বিপদে পড়েছে! রাস্তা আপসে আপ খালি হয়ে যেতো। কারণ মেইনট্যানেন্সের অভাবে কিংবা বেখেয়ালে- যে কারণেই হোক- অধিকাংশ ড্রামের মুখের ঢাকনা থাকতো না। লোকজন ওই গাড়ী দেখলেই নাকে রুমাল চেপে দৌড় লাগাতো। অতি উৎস্যুক কেউ কেউ চালককে জিজ্ঞেস করতো- ভরা, না খালি? আর এ প্রশ্নের যে উত্তর পেতো তা আর লেখার যোগ্য নয়। ওরা একটু ভিন্ন ভাষায়-ভিন্ন উচ্চারণে- উর্র্দু-হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে মিশিয়ে কথা বলতো। সন্ধ্যা হলে ওরা নিজেদের হাতে বানানো মদ গিলে ব্যপক গানবাজনা করতো। লুকিয়ে লুকিয়ে বহুদিন আমরা ঐসব দেখতে গেছি। বড় হয়ে গেছি শুয়োরের ছবি তুলতে। অনেক শুয়োর পালতো ওরা। সে যা-ই হোক, আমাদেরও একটা আদ্দিকালের ল্যাট্রিন ছিল, চুণ-শুরকির ছাদঢালাই দেয়া। এখনো আছে- পরিত্যক্ত। জিনিসটার উপস্থিতি জমির ম্যাপের ভেতরে নির্দেশিত বলে মা ওটা ভাঙতে চান না। আমরা সম্মান করে বলতাম ‘-মন্দির’। বাবা মাঝে মাঝে পৌরসভায় নির্দিষ্ট ফরম পুরণ করে মেথর আসার আবেদন করে আসতেন। ওরা আসতে গড়িমসি করতো। সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছালে তবে আসতো। আহ্ কী ভাব তখন তাদের, হাঁকডাক আর হম্বিতম্বি করতো। ঐদিন আমাদের- ছোটদের, গৃহবন্দী থাকতে হতো- কারণ মায়ের ছিলো ভয়ানক শুচিবাই। তারই ফাঁকফোকড়ে ওদের কর্র্মকাণ্ড দেখতাম লুকিয়ে। খুব সাবলীলভাবে ওরা কাজটা করতো। সেফটি ট্যাঙ্কের ওপরের গোল স্ল্যাবটা উঠিয়ে ওদের একজন ঐ আজগুবি বালতি ভরে তুলে আনতো- আর একজন সেই বালতি ঢেলে দিতো গাড়ীর ড্রামে। ওদের নাক ঢাকতে হতো না। কথা বললে ওদের মুখ থেকে বিকট দুর্র্গন্ধ পেতাম- পান্তা পচিয়ে বানানো দেশি মদের। অন্যসব গন্ধ তার কাছে তুচ্ছ! তো, কাজ শেষ হবার পর খানাপ্রধানকে একটা কাগজে সই করে দিতে হতো পরিমানসহ। নিরক্ষর মেথর-সর্র্দার বাবাকে বললেন, “লিখিয়া দেন ইধারসে ম্যেথর আসিয়া দুইগাড়ী গু ল্যইয়া গেসে”। আমাদের নীতিবান বাবা বললেন, “কই, একগাড়ী এনেছ যে?” সর্দার সংশোধন করে বললেন, “তাইলে লিখিয়া দেন ম্যেথর আসিয়া এক্ক গাড়ী গু ল্যইয়া গেসে”। বাবা চটে উঠলেন- “একগাড়ীওতো হয়নি, যা নিলে…”। সর্দার পুনরায় ঠিক করে বললেন, “তাইলে বাবু খিকখেন, ম্যেথর আসিয়া আধাগাড়ী গু লিয়া গ্যেছে…।

এখন ভাবি, দুইগাড়ী লিখলেই বা কী ক্ষতি ছিল? হীরা-জহরত তো আর নেয়নি, কেবল গু-ই তো!

টেরাক

লক্কর-ঝক্কর ট্রাকটা এসে ল্যান্ড করলো ঠিক আমাদের দাড়িয়াবান্ধা আর ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টের উপরেই। শালা আর জায়গা পেলোনা। কিন্তু যাবেই বা কোথায়? পাবলিক স্কুলের পুরো মাঠটাতেই তো একহাঁটু প্যাঁচপেচে কাদা। ওখানে নামার প্রশ্নই আসে না। আমরা ভাবছিলাম হয়তো মাল আনলোড করেই ওটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যাবে। কিন্তু ট্রাকটা তো খালি! হেলপার চালিয়ে এসেছে- ২/১ জন লেবার যারা ছিলো, নেমে কোথায় যেন গেল আর ফিরে এলো না। এলো না তো এলোই না। যাবার সময় দুয়েকটা কাজের জিনিস যেমন, ইঞ্জিন কী আর জেড আকৃতির ক্রাঙ্ক হ্যান্ডেলটা নিয়ে গেলো। সে আমলে ওটা ট্রাকের সামনে রেডিয়েটরে নীচ দিয়ে ঢুকিয়ে প্রবল বেগে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইঞ্জিন স্টার্র্ট করাতে হতো। আমাদের ঐ বয়সে গার্জেনবিহীন একটা ট্রাক তো মহা কৌতুহলের বস্তু! প্রথমে সদলবলে ওটার পেছনের ক্যরিয়ারে উঠে আমরা দাপাদাপি করলাম। তাতে শান্তি হোলো না। এরপর সাহস করে ওটার ড্রাইভিং কম্পার্টমেন্ট ধরে টানলাম। আরে, দরজা তো আটকানো নয়। তাহলে তো ট্রাকটা চালানোই যাবে। মুখ দিয়ে ভ্রভ্রভ্ররররররররররর শব্দ করে আর স্টিয়ারিং এলোমেলো ঘুরিয়ে কিছুদিন ট্রাক ড্রাইভার খেলা হলো। সহিদ তার মধ্যে বেশ কায়দা করে তালে তালে বলছে, ‘অকুপাইডস, অকুপাইডস’। শব্দটা তখন আমরা কেবল শুনেছি, কিন্তু মানে জানতাম না। এরপর শুরু হলো অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং! ড্যাশবোর্ডের প্লাস্টিক-মেটাল আউটফিট ভেঙেচুড়ে ওটার নাড়িভূড়ি বের করতে আমাদের বেশিদিন লাগলো না। এরপর সিটের নামকাওয়াস্তে গদি খুটে খুটে সর্র্বনাশ করা হলো। কেউ কেউ ওটার ছাদে উঠে উদ্দাম অঙ্গভঙ্গী করে বেশি মজা পেত। এমনি করে করে ট্রাকটা আমাদের প্রতিদিনের খেলার অপরিহার্র্য উপকরণে পরিনত হলো। ‘পলাপলি’ খেলায় ওটার নীচে মাটির গভীরে বসে যাওয়া ফাঁটা টায়ারের আড়ালে কিংবা ড্যাশবোর্ডের ‘গুহায়’ লুকানোর চমৎকার যায়গা আমরা খুঁজে পেতাম। এবং ততদিনে বুঝতে পেরেছিলাম- ট্রাকটা পরিত্যাক্ত। কেউ কেউ পুকুরে গোসল শেষে ওটার ছাদে লুঙ্গী শুকাতো। দুপুরে ভাত খেয়ে বড়ই আমলকি নিয়ে ট্রাকের ভেতরে বসে খেতে খেতে চমৎকার আড্ডা জমানো যেতো। ততদিনে লক্ষ করেছি ট্রাকের অনেক যন্ত্রাংশ উধাও হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি। চাকা আর সামনের টারিট বাদে পেছনের কেরিয়ারটা পুরোটাই লোপাট। ভেতরে স্টিয়ারিং ছাড়া আদতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। কিছু ইলেকট্রিক তার কিলবিল করে বেহুদা ঝুলে আছে। মিটারের গর্র্তগুলো খালি পরে আছে… অন্তত মাস ছয়েক চলে যাবার পর- যখন ট্রাকটার উপস্থিতি আমাদের কাছে সয়ে গেছে এবং উদাসীন হয়ে গেছি- তখন একদিন সকালে ট্রাক কিংবা ট্রাকের কঙ্কাল খণ্ড খণ্ড করে খুলে কয়েকটা লোক ঠেলাগাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেলো। চলে যাবার পর যায়গাটা খুব ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছিল। আমরা তাকিয়ে দেখলাম নীচে লম্বা লম্বা হলুদ ঘাস গজিয়েছে…!

ফাদার রিকবি

ফাদার রিকবি প্রায় প্রতি সপ্তাহে আমাদের পাড়ায় আসতেন গল্প করতে- তাঁর আঠাশ ইঞ্চি ফনিক্স সাইকেলে চেপে। মাঠে দাঁড়িয়াবান্ধা আর ফুটবল খেলতে থাকা ছেলেমেয়েরা তাকে দেখতে পেলেই হইহই করে সাইকেলের পেছনে জড়ো হতো। কেউ কেউ আরও বিরক্ত করতো- ক্যারিয়ার টেনে ধরতো পেছন থেকে, সাইকেলে উঠতে চাইতো। ফাদার কোনমতে তাদের ম্যানেজ করতেন। নেমে পড়ে সাইকেল ধরে হেঁটে হেঁটে এগোতেন। পাড়ার ২/১টা বাড়ীতে তার গতায়ত ছিলো বেশি। কিন্তু এর বাইরে মিশতেন সকল পিচ্চি-পোলাপানদের সাথে। ধবধবে সাদা পাদ্রিদের ঢোলা পোশাক আর কোমরে বাধা মোটা উলের কালো কর্ড আর কালো টুপিতে তাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাতো। আগোছালো শব্দচয়নে পরিষ্কার বাংলা বলার চেষ্টা করতেন উনি। আমরা তাঁর আরষ্ঠ উচ্চারণ শুনে হ্য হ্য করে হাসতাম, হেসে গড়িয়ে পড়তাম। ফাদার অপ্রতিভ হতেন- মাইন্ড করতেন না। এমনকি পেছন থেকে অনেক বখে যাওয়া ছেলে-ছোকড়ারা তাকে ‘শাদা-বান্দর’ বলার পরেও- ফাদার যে বুজতেন না, তা নয়।

এলাকার দুটি তরুণের সাথে ছিলো তাঁর প্রকৃত ফ্রেন্ডশিপ। আমার বড়দা ( পরলোকগত ডাঃ দেবাশীষ সমদ্দার) আর তোতাভাইয়ের (Enayet Karim) সাথে। কারণ, এঁদের দুজনের মাথাতেই তিনি ডাকটিকেট সংগ্রহের পোকাটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। বিশাল সংগ্রহ ছিলো তাদের ডাকটিকেট, ভিউকার্ড, কয়েন আর ফার্স্টডে কভারের। ফাদার নিয়মিত আমাদের বাসায় আসতেন। বাঙালী খাবার পছন্দ করতেন খুব। খেলা থেকে বাসায় ফিরে মাঝে মাঝেই দেখতাম ফাদার মুড়ির মোয়া খাচ্ছেন কিংবা পুঁইশাকের ডাঁটা চিবুচ্ছেন সন্তর্পনে। আমাকে কেনো যে ডাকতেন ‘ধাঁধাল’ বলে- সেটা আজও রহস্য। কারণ, প্রাইমারী লেভেলের ঐ বয়সটা ঠিক ধান্ধালী করার বয়স নয়। সম্ভবত দুষ্টু, চালাক, চঞ্চল ইত্যাদি শব্দের পরিপূরক হিসেবে তিনি ওটা কারো কাছ থেকে শিখে থাকবেন।হঠাৎ করেই ফাদারের আসা বন্ধ হয়ে গেলো। তিনি থাকতেন অক্সফোর্ড মিশন এর ভেতরে। একরাতে কারা যেনো তাকে মেরে ফেললো। দিনদুয়েক পরে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে তাকে উদ্ধার করা হলো। নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর কম্বল পেঁচানো তাঁর লাশ সাইকেলের সাথে বেঁধে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিলো!এতোবছর পর আজও ফাদারের জন্য দুঃখ ও গ্লানি বোধ করি। পরপারে ভালো আছেন নিশ্চয়ই ফাদার!

(ফাদার রিকবির মৃত্যুর কিছুদিন পর বরিশালের কোন এক স্মরণিকায় এই ছবিটি বড় করে ছাপা হয়েছিলো।)

 

কালী

বার্ধক্যজনিত কারণে কালীকে বিদায় করতে হলো। ওর যৌবনগত হয়েছে, হাঁটতে, চিবুতে কষ্ট হয়-চোখেও বোধহয় কম দেখে- আমাদের পরিবারের তখন তেমন বিলাসীতা করার সময় নয় যে একটি উপযোগিতাহীন গৃহপালিত প্রাণীকে বৃদ্ধাশ্রমের আয়োজনে বসিয়ে রাখি। বিশেষত, যখন বর্ষা মৌসুমে খড় একদম পাওয়া্ যায় না। শহরে বসে গরু পালনের রেওয়াজ তখন উঠে যাচ্ছে- অন্যান্যরা বেচে দিয়েছে- কেবল আমরা্ দুধের লোভে… বাবা একদিন কোত্থেকে এক উটকো লোককে ধরে আনলো- আর লোকটা দড়ি খুলে কালীকে নিয়ে চলে গেলো! গরু বিক্রিবাটায় একটি রেওয়াজ হলো- বিক্রির পরেও পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য গিয়ে দড়ি ধরলে তাকে টাকা দিয়ে নিবৃত্ত করতে হয়। ভেতরের ঘরের ন্যাড়া চকিটাতে হাফপ্যান্ট খালিগায়ে উপুর হয়ে ঘুমের ভানে পড়ে আছি আমি। মা এসে তাড়া লাগালো আমি যাতে দড়িটা একবার গিয়ে ধরি- তাহলে অন্তত শ’খানেক টাকা সম্মানী পাওয়া যাবে। কিন্তু কালীর জন্য এমন টাকা নিতে আমার বয়ে্ই গেছে! ওর ঘাড়ে যখন একটা চিরস্থায়ী ঘাঁ তৈরি হলো- সেখানে যাতে মাছি না বসে সেজন্য ‘বোরোলিন’ আর তিব্বত পাউডার মেখে দেইনি আমি? ওকে নিয়ে ঘাস খাওয়াতে কতো দূর-দূরান্তে চলে যেতাম, কতো লোকের বকা খেতাম তাদের ক্ষেতে-বাগানে ‘মুখ দিয়েছে’ বলে। মাঝে মাঝে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেতো-ওকে বলতাম তাড়াতাড়ি চল কালী-আমার ভয় করছে। জন্তুটা খুব্ বিবেচকের ভঙ্গীতে আবছা আদুড়ে একটা ডাক দিয়ে দ্রুত পা চালাতো। ওকে নিয়ে আমার সব স্মৃতিকে একশো টাকায় আমি বিকোতে পারি? ইচ্ছে করছিলো দড়ি ধরে চিরদিনের জন্য ওকে রেখে দেই। কিন্তু আমার সে অনুভূতি যদি সবার চোখে আধিখ্যেতা মনে হয়, সেই ভয়ে লাজুক আমি…। সম্ভবত আটশো টাকায় কালীর সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ইতি ঘটলো। ও চলে যাবার পর বাবা-মার আক্ষেপ আর আফসোসে বুজলাম যারা কিনেছে- তারা পালার জন্য নেয়নি। আমি ঘুমিয়ে আছি ভেবে বাবা চাপাস্বরে মাকে বললেন- বাজারে নিয়ে যাবে ওকে- ‘কাটবে’!

পাঙ্গাসকাকু

গায়ে ঘাম। খেলার মাঠ থেকে ফিরেছি ধুলোবালি একাকার করে। কাদামাখা খালি পা। ঝরের বেগে ঘরে ঢুকেছি, উদ্দেশ্য মাটির কলসের ঠান্ডা জল খাবো। কিন্তু ঘরের ভেতর ন্যাড়াচৌকিতে পা তুলে যে লোকটি বসে আছেন হাফহাতা গেঞ্জি লুঙ্গি পড়ে, হাতপাখায় বাতাস খাচ্ছেন, তাকে দেখে কুন্ঠিত হলাম। মা রাগত স্বরে কিকি যেনো বলছেন, সেসবের তোয়াক্কা না করে লোকটির পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। তিনি হাহা করে উঠে ধরে কাছে টানলেন। পেন্নাম করোন লাগবে না, বাবাজি কোথায় আছেলা? মা এখন তাঁর কাছেই নালিশ জানালেন, দেহো পাঙ্গাস, পড়াশুনার নাম নাই, হারাদিন আঁদাড়েপাদাড়ে…!

হ্যাঁ, পাঙ্গাসকাকু। বাবার আপন ভাই নন। এমনকি তুতোভাইও নন। একই গ্রামে বসবাসকারী, কিন্তু কাকু বলতে তাকেই বুঝতাম আমরা, যেহেতু বাবার কোনো আপন ভাই নেই! এই বিদঘুটে নামের সঠিক কার্যকারণ রয়েছে। পাঙ্গাসকাকু চোখে পড়ার মতন ফরসা ছিলেন, আর ঠোঁটদুটি অস্বাভাবিক পুরু প্রশস্ত আর লাল! হয়তো সেকারনেই এমন নাম। এমনি আরও অনেক কাকুর আনাগোনা লেগেই থাকতো আমাদের বাসায়। মোনাকাকু, ধলুকাকু, মোহনকাকু….সব কাকুদেরই বরিশালে আমাদের বাড়িতে লাগাতার পদার্পন ছিলো বিভিন্ন কারণে। তার ভেতর একটা প্রধান কারণ ছিলো ডাক্তার দেখানো। বড়দা তখন ইন্টার্নি করছে শেবাচিমহা তে। তাতে কী, গ্রামের মানুষের কাছে সেটাই বড়-ডাক্তার! সমস্যা কী কাকু? বড়দা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইতো রোগের উপসর্গ। তারা তাতেই অর্ধেক ভালো হয়ে যেতেন। মাকে বলতেন, বৌদি, খোকন যে কয়ডা “ফরমুলা” জিগাইলে, মোগো গেরামের ডাক্তারেতো হেকয়ডা জিগাইলেনা!”

কাকুদের আরও একটা কারণে টাউনে আসতে হতো। কেসের তারিখ পড়লে বা জমি “লাগানোর” টাকা দিতে। কেস মানে জমিসংক্রান্ত মামলা, জানতাম, কিন্তু জমি লাগানোর ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না (এখনো বুঝি না :)।  জমি কি চারাগাছ, যে লাগাতে হবে? তবে এর সাথে টাকাপয়সা জড়িত, সেটা বুজতাম, মায়ের অসন্তুষ্টিতে! বাবাকে প্রেশার দিতেন, “এইবার এতো কম টাকা দেছে কেন্? আমাগো জমিতে ধান কি কম ওডে? কতগুলা গাছ! পুষ্কনির মাছতো সব ওরাই খায়!” বাবা চেপে যেতেন, বাদ দাও, গরীর মানুষ!… তা শুনে মা আরও চটে যেতো!… আমরা কি জমিদার? শ্বশুড়ে জমি করছে হালুডি কইররা। তুমি সব বিলাইতে আছো!”
” আহ্ থামো তো, শুনবে!” বাবা চাপাস্বরে বলতেন। কাকুরা বারান্দার চৌকিতে শুয়ে সবই শুনতেন, না শোনার মত। বাবা কখনো মায়ের প্ররোচনায় তাদের কিছু বলতেন না। একটু বড় হবার পর, বাবার ওপর বেশ রাগ হতো এজন্য। বাবা বছরে একবার বাড়ি যেতেন, চেঁচরি, তেলিখালি, কৈখালি, মইষপুরা, বোত্লা  এইসব নাম শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। যাওয়া হয়নি কখনো। বিভিন্ন অঞ্চলে জমি ছিলো আমাদের। মা মাঝেমাঝে তাল দিতো, এইবার তুকুরে নিয়া যাও, ওর পরীক্ষা শেষ, বাড়ি যাউক তোমার লগে। বাবা রাজি হতেন না। কারণগুলো পরে জেনেছি। দেশে আমাদের বাড়িঘর ছিলো না। অন্যের বাড়িতে নিজে যেভাবে থাকেন, ছেলেকে সেখানে নিতে চাননি। বাবার এই বাবাসুলভ অনুভুতিটার খবর মা কোনদিনই তলিয়ে দেখেননি। অগত্যা ক্যাম্বিসের চামড়ার ব্যাগে দু একটা লুঙ্গি গামছা চশমা, দু ব্যাটারির টর্চলাইট আর ক্ষৌরি করার যন্ত্রপাতি ভরে ছাতাসমেত বাবা একতলা কাঠবডি চরদোয়ানির লঞ্চে চড়ে বসতেন। নামতেন হুলারহাট বা ভান্ডারিয়া। আঠালো কাদায় গদগদে কাঁচা রাস্তায় মাইল দশেক যাবার পর সন্ধ্যাসন্ধ্যি গ্রামে ঢুকলে কাকীরা শঙ্খে ফুঁ বা তুলশীতলায় প্রদীপ দেখিয়ে বাবাকে দেখে একহাত ঘোমটা টেনে “দাদা, আইছেন?” বলে মাটিতে গড়প্রণাম করতেন!

সপ্তাখানেক পর রুক্ষু চেহারা নিয়ে বাবা ফিরতেন একব্যাগ সুপারি, কলার মোচা, সেরদুয়েক রাই সরিষা, হাতেভাজা মুড়ি, খইয়ের ধান আর কিছু টাকা নিয়ে। মায়ের জেরা শুরু হতো তখন। বাবা দশ কথার একটা হয়তো উত্তর দিতেন। মা গজগজ করেই যেতেন, যে কম টাকায় বন্দোবস্ত নেয়ার কথা বলে গেছেন কাকুরা, দিয়েছেন তারও অর্ধেক। “তুমি কিছু কইতে পারলা না?”

– কি বলবো? বাবা কাঁধ ঝাঁকিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গীতে শ্রাগ করতেন। দেশের মানুষের হাতে টাকা নাই তো! মোনার পোলাপানগুলি ইস্কুলে যায়…!

আমার এমন বোকাবাবাকে আমার মা, আমরা কেউই কোনদিন বুঝিনি।

শ্বেতবামন

১.

পোলার বিয়ারের অন্তর্ধানের সাথে সাথে পোলার আইসক্যাপও যে শুন্যে মিলিয়ে যাবে, তা থিংকট্যাঙ্করা জানতো সেই কোভিদ যুগের সীমানা থেকেই। এখন সেখানে খাঁখাঁ অন্ধকারের মতো জমাট বাষ্প খেলা করে, আর ঘনগভীর গিরিখাতের অন্তিম অভিঘাতে শিরশিরে প্রস্রবণের ঋঋ ছন্দ তোলে! আলোচ্য গল্পের সেখানেই শুরু।

আজ মানুষ তার অস্তিত্ত্বকে সহজসাধ্য করতে অবশেষে পরিবেশের অপার্থিব মূল্য বুঝতে শিখেছে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে পানির ট্যাঙ্কের পাশাপাশি আইসস্লট রয়েছে। ঘাবড়াবেন না, আইসস্লট এমন হাতিঘোড়া কিছুই না। পোলার আইস শুকিয়ে যাবার পর সেন্ট্রাল ডিফেন্স স্টক থেকে এক সিও (সেন্ট্রাল অর্ডার) জারি করা হয়েছে, যাতে নির্ধারিত আকারে প্রতিটি বাড়ির মাচায় একটি করে বরফ-ছাদ তৈরি থাকে।

এটা এখন বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, প্রযুক্তি আজ যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে তাতে উষ্ণ-শীতল প্রকৃতি নির্বিশেষ এই আইসস্লট স্থাপন তেমন কঠিন কিছু নয়। যখন বা যেদিন যেদিন সূর্য ওঠে, তার উত্তাপেও এই বরফ গলে পড়ে না। ফলত, মেরুতুষারের বিকল্প হিসেবে এটা পৃথিবীকে পার্থিব উষ্ণায়ন থেকে বিরত রাখছে। তাছাড়া বরফের ওমন সুন্দর একটা স্ল্যাব থাকায় ইমারতগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখনসই হয়েছে। আপনাদের মধ্যে কারো কারো অরিয়েন্টাল স্থাপত্যকলার প্রতি অনুরাগ থাকতেই পারে, কিন্তু একথা বিস্মৃত হলে চলবে না যে, আমরা একটি ন্যানোউৎকর্ষময় শহুরেসভ্যতায় প্রবেশ করেছি। তৎকালীন হলিউডি বলিউডি তামিল তারাজু এমন কোনো উৎপটাং কল্পনা নেই, যা বর্তমানে অপ্রতুল! বুজতে পারছি, এসব শুনে আপনার মনে একবিংশ শতকের মানুষের বাচ্চার মতো এন্তার কথাপ্রশ্ন খাবি খাচ্ছে, তাইতো?…. আরে বাবা উৎকর্ষের কোন্ স্তরে বাস করছি আমরা, ভাবতে পারেন? একে বলে প্লাস্টিক-শেসন! যার বাঙলা করলে দাঁড়ায় প্রাচ্য-গলিত-পশু-শাসন! বুজলেন এবার? মানেটা একটু খটোমটো হলেও এর কোন্ কোন্ অবদানকে অতঃপর তোমরা অস্বীকার করবে? চুলো জ্বালার বালাই নেই, ঘুমানোর জন্য আলাদা বালিশ-বিছানা-সময় কোনোটাই লাগেনা, কাজ করতে করতে, চোখ খোলা রেখেই যখন তখন মানুষ ঘন্টাদুয়েক ঘুমিয়ে নিতে পারে। এহেন বাইপোলার শক্তিসঞ্চয়ের জন্য পোলার বিয়ার ত্যাগ করা তো মামুলী ব্যাপার। সেকালে এসব আদিখ্যেতাকে ‘সোশালভ্যালু’ নামে ডাকা হতো। প্রকৃতি তখন ছিলো নগরজীবন বহির্ভুত ছিনাল স্বভাবের। যখন ইচ্ছা কালবৈশাখী, যখন ইচ্ছা মৃদুমন্দ, যখন ইচ্ছা টিনের চালে রিমঝিম– এসব এখন চলবে না চাঁদু!

অরণ্যশঙ্কুল জনগোষ্ঠীকে কেনো কে জানে তখন ‘আদি’ বলে ডাকা হতো। কিন্তু অধুনা এই প্রাচ্য-গলিত শাসন ব্যবস্থায় বৃক্ষ একটি অতি ঘনিষ্ট উপকরণ হিসেবে সাব্যস্ত। প্রতিটি যৌথযাপনের (=পরিবারের) জন্য বৃক্ষপালন বাধ্যতামূলক। বলতে পারেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি আহরণের এর চেয়ে সমীচীন পথ আর দ্বিতীয়টি নেই। কারণ, বৃক্ষভেদে অম্লজানের তীব্রতা, গভীরতা বিভিন্ন হয়। ফলে, তার ভেদবিদ্যা যেমন সমাদৃত, তেমনি অবশিষ্ট প্রতিটি বৃক্ষ এখন গৃহদেবতার সম্পদ। পাতলা, কিন্তু অভঙ্গুর কাঁচের এ্যাকুরিয়াম-সদৃশ্য বিশাল বিশাল জারে আচ্ছাদিত প্রতিটি বৃক্ষ এখন দ্বারে দ্বারে সুশোভিত। চাইলেই বেলীফুলের সুবাস এখন সুলভ্য নয়। ওই কাঁচের জারের ভেতরে যে অম্লজান বিশ্লিষ্ট হয়- প্রতিটি যৌথযাপন তা দিয়ে প্রতিদিনকার নিঃশ্বাস নেয়ার পরেও বাড়তি অম্লজান পাঠিয়ে দেয় আমাজনে! আরে না না, ওই আমাজন নয়- যেটা পুড়ে ফসিল হয়ে গেছে! এ হলো একবিংশ শতকে উদ্ভাবিত সেই অনলাইন শপিং ব্যবস্থা, যা আজও টিকে আছে। ঘর সাজাবার রাবুত থেকে শুরু করে লেটেস্ট ডিজাইনের ইরাকুস, সবই এখানে বিকোয়। তবে ঘনীকৃত অম্লজানের চাহিদার যে ডিমান্ড, তা পুরো মকরক্রান্তি জুড়েই প্রবল। তাই আমাজান সুযোগটা লুফে নিয়েছে। তাই শুনে জ্যাকবাবা অবশ্য ঘোষণা দিয়েছেন, শীঘ্রই তিনি সুপ্ত-সূর্যালোক বা স্লিপিং-সানলাইট বাজারে আনছেন!

আমাদের গোত্রের পিকো আঙ্কেল অবশ্য জ্যাকবাবার এইসব ছেঁদো কথায় খুব একটা আস্থা রাখেন না, কারণ এর আগেও তিনি এক রেঙ্গুন-রূপসীর সাথে যৌথযাপনের প্রাক্কালে প্যাকেটজাত চাঁদের আলো বাজারজাতের বারফট্টাই করেছিলেন। কিন্তু চাঁদের আলো তো দূরের কথা, একথোকা মরিচবাতিও তিনি বাজারে আনতে পারেন নি। কামারশালার এককোণে যে এলসিডি ডিসপ্লে- যা পিকো আঙ্কেল তথাকথিত ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনে চালু করেছেন – ছাতারে পাখীর ডাক নকলের উদ্দেশ্যে- সেটায় সেন্ট্রাল বুলেটিন দেখানো শুরু হতেই পিকো আঙ্কেলের মেজাজ চড়ে যায়। জ্যাকবাবার উদ্দেশ্যে সেই পুরাতন মুখখিস্তি করা অশ্রাব্য গালিটির পুনরাবৃত্তি করে পিকো আঙ্কেল তার সর্বক্ষণ কোমড়ে গোঁজা ত্যানানো মুড়ি চিবোতে চিবোতে গান ধরেন।

২.

কামারশালাকে যারা রাজনৈতিক আলোচনার আখড়া বলে মনে করেন, পিকো আংকেলের কাছে ম্যাড়ম্যাড়ে সন্ধ্যাগুলিতে তারা ভীড় করেন। গনগনে আগুন, হাপড়ের হা, নেহাইয়ে উপর্যুপরি হাতুড়ির ফুলকিতোলা ঢঢক্কার, আর জ্বলন্ত কাঠকয়লার ভেতর গলা ডুবিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে থাকা আধা আকৃতি নেয়া আদিম আয়ুধসমূহ– এসব তাদের কতোটা আন্দোলিত করে, তা বলা মুশকিল। আগুনের কাঁপা আলো কামারশালার আস্তরহীন দেয়ালে কিম্ভূত আবছায়া হয়ে দুলতে থাকে – মনে হয় গুহাচিত্রের চলমান ছায়াছবি! প্রত্যেকের শরীরে সংযোজিত কিছু না কিছু প্লাস্টিক প্রত্যঙ্গের কারণে ভীড়েরা আগুনের খুব বেশি কাছে ভীড়তে পারেনা। বহুভাষাবিদ ডঃ রিবেন দাশুড়া প্রমুখ এই সমাজব্যবস্থাকে “প্লাস্টিসিয়ান” বলে অভিহিত করেছেন। সেই মত অবশ্য পলিকার্বনেশিয়ানরা বাতিল করে দিয়েছেন। সে যা-ই হোক, একটা কথা সকলেই সম্মত হয়েছেন, “কমরেড, গড়ে তোলো, গড়ে তোলো প্রতিরোধ!” বলে বলে ফাঁকতালে এই জেনারেশনের কেউ গোলা খালি করতে পারবে না! এর পেছনে মনোসামাজিক দুর্বৃত্তায়ণকেই অনেকে ইন্ধন মনে করছেন। অবশ্য সম্পত্তি বেহাত বা চুরি হবার কনসেপ্টটাই এই প্রজন্মের কাছে বাহুল্য। এককালে পুরো দ্রাঘিমাজুড়ে যে তস্কর-বেষ্টনী তৈরি হয়েছিলো, আজ তা শুন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আধ্যাত্ব থেকে সত্ত্বার মুক্তির কারণে। দিনে দুবার ‘তাফালিং’ বেজে উঠলে সর্বসাধারণ তাদের পাথরের চোখ, হীরের নকল দাঁত আর ক্ষয়ে যাওয়া করোটি প্লাটিনাম হেলমেটের মতো খুলে রেখে নিষ্কাম সত্ত্বার পরাকাষ্ঠা হিসেবে নিয়মিত গড় করতেন। পিকো আঙ্কেল সেসব মনে করে ত্যানানো মুড়ি চিবোতে চিবোতে হাসেন। এককালে গোত্রে কোনো বৃক্ষের মৃত্যু হলে তারা শোকরাষ্ট্র করতেন। এর মানে হলো- পতিত বৃক্ষের পাশে পুঞ্জীভূত হয়ে নিরব অশ্রুমোচন। এমনকি বৃক্ষালিঙ্গন তাদের প্রধান উৎসব বলে সেসময়ে বিবেচিত হতো। আর আজ এই স্মার্ট কস্টিক-সভ্যতায়– পিকো আঙ্কেলের বিভিন্ন অসাংস্কৃতিক উপায়ে উপার্জনের পাশাপাশি রয়েছে বিস্তর আলিজালি বিষয়ে কৌতুহল ও পাণ্ডিত্য! অবশ্য খিস্তিখেউড়কে যদি তুমি পাণ্ডিত্য বলে স্বীকার করো, তবেই! তো প্রতিদিনকার রুটিনবিহীন এজেন্ডা হিসেবে তিনি অতঃপর উপস্থিত কামিনাহারামিদের উদ্দেশ্যে ভাগাড় থেকে উদ্ধারিত তার সাইলেজ ফটোট্যাবের মেমরিব্যাঙ্ক ওপেনকরতঃ বিংশ শতকের একখানি পয়ার চয়ন করেন! কে বা কাহারা কোন্ উদ্দেশ্যে এহেন অমার্জিত স্লোক রচন করতে পারেন, তা সেন্ট্রাল ডিফেন্স স্টক আজো সুরাহা করে উঠতে পারেনি। আঙ্কেল তার হাড়গিলে উদোম শরীরে ঢেউ তুলে স্বভাবচরিত ভঙ্গীতে ক্যাজন বাজিয়ে পাটের আঁশ সদৃশ্য রুক্ষুচুলগুলি নাড়াতে নাড়াতে সুর করে পড়েন:

হুক্কু হুক্কু শেয়াল ডাকে, গরু ওঠে গাছে!

যা বলার তা বলে দিছি, আরো বলার আছে –

গাছের পাতা নড়েচড়ে, নিচে ঝরে না (ভয়ে)!

পাবলিক পণ করিচ্চে রাস্তায় ময়লা ফেলবে না!

ময়নার বডি বাকশোবন্দী ময়নারতো নাই সেন্স

সৌদি থেকে আসছে দেশে পেট্রো-রেমিটেন্স! হুক্কু…

যাই নাই, তবে যাইয়া দেখলাম –দেখার কিছুই নাই–

ডেঙ্গুর ভয়ে দরজা বন্ধ, দরজার কপাট নাই!

সূধীবৃন্দের মাঝে এ থেকে যে পাঠ প্রতিক্রিয়া হয়, তা অভাবিত! তারা ময়নার বডির চেয়েও চিন্তায় পড়ে যায় বাকশোটা নিয়ে। ওটা কোন্ ম্যাটেরিয়ালে তৈরি? কাঠের না প্লাস্টিকের? প্লাস্টিক হবার কথা নয়, কারণ ওই আমলে এতোটা মরণঘনিষ্ট প্লাস্টিকের উৎকর্ষ ছিলো না। কিন্তু বাকশোটি কাঠের হলে… হায় হায় কাঠের হলে… প্রকৃতিকে রীতিমতো আঘাত করা হয়েছে, হায় হায় আঘাত করা হয়েছে… বলতে বলতে সর্বসাধারণের ভাবসমাধি হয়। তারা কাঠের ডোমিনোর মতো একে অন্যের গায়ে নিমেষেই আছড়ে পড়ে, পড়তেই থাকে।

সেন্ট্রাল ডিফেন্স স্টক এযাত্রায় পিকো আঙ্কেলকে আর রেহাই দেবেনা একথা সবাই বলাবলি করছিলো। ততক্ষণে ব্লু কভারওল আর সোনালি ফেটিগ পরিহিত ‘সেন্ট্রাল হারমোনি’-র চৌকশ একটি দল কামারশালার চারদিকে পজিশন নিয়ে ঘিরে ফেলে। তারা পিকো আঙ্কেলের যাবতীয় অস্থাবর সম্পদ যথা, প্রাচীন পুঁথি ও তার সুর, নেহাইয়ের উত্তাপ আর হাতুড়ির ঢঢক্কার, ছাতারে পাখীর বিস্তৃত কূজন এবং গনগনে কয়লার ধিকিধিকি বাজেয়াপ্ত করার অভীরুচী ব্যক্ত করে। পিকো আঙ্কেল হাসেন। তার অস্পষ্ট ছায়া আস্তরহীন দেয়ালের গায়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে। এবং সেই হাসি অতিদ্রুত লোকালয়ে ভাইরাল হয়ে যায়। অন্তর্যামীর মতো তিনি সকলের ডিভাইসে আবির্ভুত হন। শুরু হয় গন-উন্মোচন। কী এক অলীক ইশারায় সর্বসাধারণেরা একে একে কলের পুতুলের মতো ডোমিনোদশা থেকে আবার উঠে দাঁড়ায়। জোড়াতালি লাগানো লবেজান কলকব্জার মতো তাদের গা থেকে পচা শ্যাওলার আস্তর খসে খসে পড়তে থাকে- স্পার্ক করে যেনো বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ বারুদের মতো! আর গনগনে হলুদ কাঠকয়লায় গলা ডুবিয়ে থাকা উন্মুক্ত আদিম উপশিরা শিরা সহস্র শস্ত্রের মতো কিলবিল করতে থাকে!

অবিকল বিংশ শতকের মানুষের বাচ্চার মতো জোম্বীভূত সর্বসাধারণ তাফালিংয়ের তীক্ষ্ণ সাইরেন উপেক্ষা করেও কামারশালাটির চারপাশে প্রতিরোধ গড়ে তোলে– যেভাবে বৃক্ষকে তারা আলিঙ্গন করতো! তারা পরস্পরের হাত ধরে এবং একজোট হয়। বৃত্তটা ছোটো হয়ে আসে! ক্লাইমেক্সের চূড়ান্তে তখন দ্রুতলয়ে ক্যাজন বাজতে থাকে। ড্রোনশটে পুরো অঞ্চলের এরিয়েল ভিউ প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের ঘটনা বুঝতে সহায়ক হয়ে ওঠে। অতঃপর কাহিনীর অনাবৃত অংশে বর্ষা আসে। বর্ষা মেয়েটি সুশ্রী ও নৃত্যপটিয়সী। ছবি হিট হবার জন্য যা যা দরকার, সবই তার ভেতরে আপনি পাবেন। জুমলেন্সে তার সাদাভেজাশাড়ী আলোচনার কেন্দ্র হয়েছে বহুবার! হুমহুম হামিংয়ের মহরতে সেই  অবিরাম বৃষ্টির পর রাস্তায় জমে থাকা জল অপসৃত হলে নিরেট সত্যের মতো অবশিষ্ট ফোঁটা ফোঁটা জল গাছের পাতা থেকে, টিনের চালা থেকে আর ভিজে যাওয়া আস্তিন আর চুলের ডগা থেকে ঝরে পড়তে থাকে। সে জলজটে সৃষ্ট কুয়াশায় সেন্ট্রাল হারমোনির ওয়াটারপ্রুফ কাভারঅলগুলো গলে গলে কখন নেই হয়ে যায়! সবাই বলাবলি করে পিকো আঙ্কেল বৃক্ষ হয়ে গেছেন, অথবা বৃষ্টির জল! কিংবা কে জানে হয়তো একটা আস্ত দানব-নক্ষত্র যেমন শ্বেতবামন হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের গর্ভে খেলা শেষে ঢুকে পড়ে, তেমনই হয়তো…!

বিংশশতকের পয়ারমন্ত্রের কী যাদু, দেখলেন তো?

অনিবার্য কারণবশত

পুঁটকী ফাটা গরম পইড়েচে এবার! আর এই গরমে সুস্থির হইয়ে বইস্তে চালি কোতায় যাতি হবে ঢাহা শহরের মদ্দি কও দিনি? পার্কগুলোনরে তো তোমরা হাপিশ কইরে ফেইলেচো। আর আর যে সকল বিনোদনের ব্যবস্থা বানায়ে রাখিছো, তাতে তো আমার মতন ঢ্যামনারা মোততেও বসে না। তালি বাকি থাইকলো কী কতি পারো? বাকী থাইকলোতো শুদু সংসদ ভবন। বিশ্ব বিখ্যাত একটা বিল্ডিং, নাকি যে বিল্ডিংটার নকশা কইরেচিলো সে বিশ্ববিখ্যাত? আর কতো কী বিশ্ববিখ্যাত আছে আমাদের কলজের ভিতরে? লিস্টি দিতি গেলি তো রোদ ম্যালা পইড়ে যাবেনে। তবু যাই কও বাপু, এমন দরজা ছাড়া বিল্ডিং নজরুল ইসলাম আর দেখেনি। অবশ্য দরজা একদম যে নেই তাই-ই বা বলে কী করে? বাইওে থেকে দেকা যায় না ঠিকই। প্লাজা ঘুরে নিচের সুরঙ-রাস্তায় সেঁদিয়ে গেলে হোলের তলায় এন্ট্রেস আছে। তবে ঐসব রাস্তা তার মতো ক্লাশছাড়া লোকজনদের জন্য তো নয়ই, এমনকি তার নাম নিয়ে জাতীয় কবি নিজে এসেও যদি এস্ট্যান্ডআপ হয়ে থাকেন তাহলেও খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না। বলবীর- বললিই এখন আর বীরের অবাব হবিনানে। কাটারাইপেল নে হাজির হবেনে সোনার, হীরে আর চাঁদের টুকরো সব সোনামনিরা। তখন তোমার মতো ঝাকড়া চুলের বাবরি দোলায়ে আর কাজ হবিনানে বাপ। আগে এন্তার জবাবদিহি কত্তি হবে যে, সে এখানে এইয়েছিলো অবশ্যই নয় একটি নতুন বিদ্রোহী কবিতা লেখার জন্যি!

নাম: নজরুল ইসলাম
বয়স: ৪৮
সাকিন: সাতক্ষীরা জেলার অমুক উপজেলার দোন-ধোয়া খালের পাড়ে
পেশা: বান্দর খেলা (দেখানো)
উচ্চতা: ৩ ফুট সাড়ে ইঞ্চি

এই উচ্চতাটাই তাকে গাড্ডায় ফেলে দিয়েছে। বেশি লম্বা লোক যা হোক তবুও একটু কোলকুঁজো হয়ে বা নুয়ে বাঁকিয়ে হেঁটে নিজের দুই এক ইঞ্চি কমাতে পারে। কিন্তু তার মতো বাঁটকুলুদের সামনে কোন অপশনই রাখেননি পরওয়ারদেগার। তাই এখন আর এই বয়সে লম্বা হবার কোন আশা না করে বরং মাথা উঁচু করেই সে হাঁটে। কিন্তু হাঁটলে কি হবে? তার মাথা অন্যের কোমর পর্যন্ত যায়। ফলে খুবই হাস্যকর লাগে দেখতে। তাকে মিলিটারী মেজাজে গম্ভীর মুখে হাঁটতে দেখলেও প্রথমত বাচ্চা পোলাপান আর পুলিশেরা শুরু করে যন্ত্রণা। টোকাইদের যন্ত্রণা তবু সহ্য করা যায়। কিন্তু পুলিশগুলোর মুখ না জানি খাটা পায়খানা। নাম ধাম কিচ্ছু না, ওকে দেখলেই ডাক পারে- ওই মাদারচোদ, এদিক আয় হাউয়ার নাতি! আর তাকে দেখলেই শালাদের কোন না কোন কাজ মনে পড়ে যাবে। একবার এক শালার রাজা কনডম পর্যন্ত কিনে এনে দিতে হয়েছিলো। কেনরে শালা? গাড় মারাবি তুই, আর ন্যাকড়া নে আমারি ঠায় দাঁড়ায়ে থাকতি হবি কি জন্যি? নজরুল ইসলামের মেজাজ যে কী পরিমাণ গরম, তা বোঝা যাবে শুধু তার কাঁচাপাকা জুলপি বেয়ে ঘামের স্রোতের বহর দেখে। এই গরমে কার না মেজাজ তাতে? আর ঢাহা শহরের বাড়িওলাদের তেল কী রকম বাড়িছে দিন দিন খেয়াল করিচো? দেখলে হাগা বন্ধ হয়ে যায়। উরিব্বাপ! তিনতলার ফাউন্ডেশনে আঠের তলা তুলতেও শালাদের কোন বিকার নেই। বাপদাদার নাম নাই ট্যামগোপালের নাতি! খেয়াল করো, এই গরমের মদ্দে ইটা বালি সুঁড়কি সিমেন্ট সিফটিন বাটালি হাতুড়ি ক্রাশার…তো এই গরমে নজরুল ইসলাম জাতীয় প্রাণীদের বাঁচার- আর জীবন ধারণের (বাঁচে যারা সবাই তারা জীবনধারণ করে না, আর যারা জীবনধারণ করে আছে… থাক থাক বাপ, তোমাকে আর এই ধূলার দুপুরে দার্শনিকতা করি নাম কামাতে হবে না!) একমাত্র পথ হলো জাতীয় সংসদ ভবন! আর তাই নজরুল ইসলাম সন্দে হলেই রাইতের বেলায় বান্দর খেলা দেখায় সংসদ ভবনে। তার সাথে একটা হাড় জিরজিরে সিড়িঙ্গে গোছের বান্দর। আরেবাহ্, বান্দরতো মাস্ট। নাকি তোমরা চাও নজরুল ইসলাম নিজেই বান্দর হয়ে খেলা দেখিয়ে সবাইকে বিনুদোন করুক? তা বাবা সেইসব দিন কি আর আছে? সংস্কৃতি নাকি এখন আকাশের দখলে। কার বাড়িতে কী রান্না হচ্ছে সব চলে যাচ্ছে চ্যানেলে চ্যানেলে। কোনোকিছু চাপায়ে রাখার জো নেই। তা কোনো মদনকে তো দ্যাকলাম না নজরুল ইসলামের মতো একজন প্রোতীভাধড়, স্বোপার্জিত বান্দর খেলোয়াড়কে নিয়ে স্টোরি করতি। অন্তত কোনো না কোনো টকশোতে তো কমপক্ষে এটলিস্ট বান্দরের একটা ইন্টারভিউ নেয়া যেতো! যা চলছে আজকাল! বান্দর অন্তত তার চেয়েও খারাপ কিছু বলতো না। তবে একটা সমস্যা হতো এক্ষেত্রে। এক চ্যনেলে এক ধারায় কথা বলে ফির আর এক চ্যানেলে অন্য কথা বলতে পারতো না এই বান্দর। যদিও দেখলেই বোঝা যায়, শালা শয়তানের সাত নম্বর দাদাভাই! কিন্তু ব্যাটা চলে পাতায় পাতায়- নজরুল ইসলাম কে তুষিয়ে। এ যাবৎ সতের বার নজরুল ইসলাম এই কুজাতটাকে বাড়িছাড়া করেছে। প্রতিবছরে একবার করে। কিন্তু হারামিটা যায় না, আবার ফিরে আসে। খামশি খেয়ে পড়ে থাকে। মাঝে দু একবার অতিষ্ট হয়ে নজরুল ইসলাম নিজেই বান্দরকে ফাঁকি দিতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। শয়তানের দাদাভাই ঠিক ঠিক গন্ধে গন্ধে হাজির হয়ে ধরে ফেলেছে তাকে। ধরি ফেলিচো? ও আমার নাঙ চোদানী তোমার জন্য আমার জীবন চলি গেলো শালী, তবু তোর হাত দে নিস্তার নেইকো ঢংমারানি। ওরে আমার কুলাঙ্গারের শনির আখড়া…! এই জন্নিই তোরে আমি পেটে ধরিনি। তোর মতোন বান্দর জর্ম দিতি পাল্লি আজ কি আমার বাটকুলু হইয়ে থাকতি হতো? কেবল আফসোস করে নজরুল ইসলাম। এই শালীর বান্দরের জন্যি তার কিছুই করা হলো না। আর এখন একমাত্র উপার্জনের পথ এই বান্দর। শালী সেটা বোঝে, কিন্তু তারপরও ওর জন্যে মায়া মহব্বতে কম নাকাল হতে হয়নি। এবং ভবিষ্যতে আরো কতো নাকানি চোবানি কপালে আছে কে জানে? অপ্রচলিত হলেও কথাটা সত্যি যে নজরুলের জিবনেও পেরেম এইসেচিলো। তা তার হবু প্রেমিকা প্রথমেই শর্ত জুইড়ে দিলো: ওই বান্দররে বন্দরে ফেলাইয়া তারপর আহো বেপারি। দুইজন মিল্লা রোজগার করমু, তুমি খদ্দের ডাইক্কা আনবা আর আমি… বান্দর রাখোন যাইবো না কইলাম। রান্দর দেকলে আমার শইল কাঁপে ডরে! বাইরের আপামর ভদ্রসমাজ এসব ঘটনার কিছুই জানে না। বান্দরের ইতিহাস নিয়ে নজরুলের ঝুলিতে কিছু ভালোমানুষ টাইপের নির্দোষ উত্তর আছে। যেমন কেউ যখন জিজ্ঞেস করে:
– এই বান্দর পাইছো কই? উত্তর: আল্লায় দিচে। সাত দিন আগে অগেরে আমি কিনিচি হাটেরত্থে…
– কত দামে? উত্তর: বারোশো টাহা দরে
– কয়টা খেলা পারে বান্দর? উত্তর: সতেরটা খেলা দেহাতি পারে
– কে শিখাইছে এই খেলাগুলান? যার কাছ থিকা কিনছো, সে? উত্তর: না। সেই মুনিব শিখায়েচিলো তিনচাইরডে, বাকীগুলোন আমার হাতে পইড়ে শিখেচে বাবা। আসলি, কদিন গেলি ও আরো বেশি খেলা শিকতি পারবি। (কচু! সতের বছর থেকে এই বান্দরকে ৪/৫টার বেশি খেলা শেখাতে পারেনি নজরুল ইসলাম। বরং তার নিজের আচরণের মধ্যে বান্দরের কিছু ’ফরমুলা’ ঢুকে গেছে। কিন্তু এমুন এমুন বললি মানুষের সিমপ্যাথি বাড়ে, জানে সে।)
– ও, তাইলে তুমিওতো কম বান্দর না! নাম কি বান্দরের? উত্তর: টাইগার! নজরুল ইসলাম এমন হুড়ুম মেরে নামটা বলে যেন সে নিজেই হুালুম করে এখনি কারো ঘাড়ে লাফিয়ে পড়েেত জানে কিন্তু নেহাত করুণাবশত পড়ছে না।
– তা দেখাও দেখি তোমার বান্দর কী খেলা পারে দেখি…
নজরুল ইসলাম তখন হাতের লাঠিটা দিয়ে মাটিতে জোরে শব্দ করে আঘাত করে। মুখ দিয়ে কুৎকুত আওয়াজও তোলে একসাথে। এই শব্দে বান্দর কিছুটা বশে থাকে। শালা শয়তানের দাদাভাই ঠিক বোঝে এখন রোজগারের সময় বাতেলা করলে চলবে না। মেজাজ বুঝে নজরুল ইসলাম যেমন বলে, তাই করার চেষ্টা করে। কিন্তু পাবলিকের আনন্দ পাওয়ার বা গ্রহণ করার আগ্রহ সীমাহীন। কিসে যে সে আনন্দিত হবে তা একমাত্র সে-ই জানে। কখনো বান্দর পেটানো দেখে মজা পায়। আবার কখনোবা মানুষকে বান্দরে পেটাচ্ছে- সেটা দেখেও তার আমোদ। আর এই সব আমোদ প্রমোদের ক্যটালিস্ট হিসেবে টাইগার যখন তার কাঙ্খিত আচরণ করতে ব্যর্থ হয়, পাবলিক তখন হই হই সোরগোল করে ওঠে। তখন দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নজরুল ইসলাম তার সাড়ে তিনফুঠি শরীরটা নিয়ে জাম্বুবানের মতো লাফিয়ে পড়ে বান্দরের পিঠে এলোপাতারি লাঠির ঘা বসিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে পিঠ কেটে রক্তও বের হয় তাতে। হায়, নজরুল ইসলামের যদি পাভলভের এনিমেল সাইকোলজি পড়া থাকতো!

তবে এ ধরনের ঘটনা খুব বেশি একটা ঘটে না। কেননা বান্দর খেলা দেখার লোক কৈ? সব শালাই তো বান্দরের মত দৌঁড়োচ্ছে। ঢাকাশহর কখন জিরোয় বলতি পারো? তারপরও এই সংসদ ভবনে দুপুরের পর থেকেই কিছু লোকজন হাওয়া খেতে আসে। তখন অবশ্য চড়া রোদ। সবচেয়ে ভীড় হয় আসেপাশের অঞ্চলে লোডশেডিং হলে। পয়েন্ট টু বি নোটেড- কিছু শখের ডাকে সাড়া দেবার জন্যি মেয়েমানুষদের আনাগোনা – যদি চোখ থাকে তো দেখতে পাবে। আবার বাজার গরমে, রাজনীতির গরমে আর ঘামের আরামে অতিষ্ট যারা, তারাও আসে তাতানো মেজাজ ঠান্ডার আশায়। মানুষগুলো তখন ছায়া ছায়া। সেই ছায়া মানুষগুলো তখন কী করতো যাদি না নজরুল ইসলামের মতো শখ-প্রশমনকারী না থাকতো। কেউ কেউ গায়ের জামাটা আধখোলা করে শরীরটা ঠান্ডা করার অছিলায় ঠ্যাং ছড়িয়ে কংক্রিটের মেঝেতে বসে। কেউবা ঘাসে বসে ঘাসের বারোটা বাজায়। (এই ঘাস লাগানোর টেন্ডার কেমন করে হয়, তা কি তারা জানে?) কিন্তু সিঁড়িতে কেউ বসে না। বসতে গেলেই আনছার ভাইয়েরা সিটি বাজায়। সিকিউরিটি ম্যাটার বলে এখানে সর্বসাধারণের বসা নিষেধ। তা বাবা নজরুল ইসলাম তো সর্ব-অসাধারণ। তাকে বসতি দিতি চাও না কিজৈন্যে? তোমরা আসোলি নজরুল ইসলামের মর্ম বুঝতি পাল্লি না। এই দ্যাহো, আমার টাইগার কী কী দেহাতি পারে। হা, তা দেখাও তো আমার রাজা বাপধন, সাদ্দামের সৈন্ন কী করি বুশের পেলেন ধংশো কইরলো? (বান্দর তখন ক্ষেপণাস্ত্র মারা ভঙ্গী করে!) সাব্বাস, তা পুঁইশাকের ডাঁটা নিয়ি নাতিজামাই বাড়ি যাতি হবি ছাইকেল চড়ি, দেখাও তো বাপা। ও বাপ, ছাইকেলে আমাকেও নিতি হবি (নজরুলের গলায় আহ্লাদ গলে গলে পড়ে)। ও মা রাগ হইয়েচে! ছাইকেলে সে নেপে না কাউরি, একা যাবি। (বলতেই বান্দর শালা লাঠিটাকে নিজের পেটের তলে সোজা করে নিয়ে পা দিয়ে প্যাডেল মারার ভঙ্গী করে)। তারপর ছাইকেলে চড়ি মাঝরাস্তায় একসিডেন হয়ি পড়ি গেলা তুমি! (বান্দর এখন তিনদিনের বাসি মড়ার মতো স্পিকটি নট্) ও বাপা, কী হইয়েচে তোমার? এড়ি গেচো? (নজরুলের গলায় কান্নার সর্দি জমে)। আহারে আমার রাজা বাপধন, ওঠো ওঠো, এম্বুলেন্সে খপর দিতি হবিনানে? (বান্দর ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এম্বুলেন্সে খবর দিতে যায়)। হা, ছিরিকিশনো কী করি ননীচুরি কইরলো দেখাও তো বাপ। – হইয়েচে। এবার দেকপেন আট তারিখে জনগনের শোতরু এরশাদ সিকদার কী কইরে ফাঁসিতে ঝুইলচে। বলে বান্দরের গলায় বাঁধা দড়ি ধরে নজরুল ইসলাম হ্যাঁচকা টানে উপর দিকে টেনে তোলে। যেনো এভাবেই সে একদিন এই কুজাতটাকে একদম শেষ খেলা দেখিয়ে ছাড়বে। কিন্তু বান্দর চালাক আছে। বড়শীর মত আঙুলগুলো দিয়ে ঝট করে সে ঝুলন্ত দড়িটা দুহাতে ধরে ফেলে। পাবলিক হই হই করে ওঠে। ওই মিয়া, মইরা যাইবো তো বান্দরে। শালা কষাই। ওই মাদারচোদ তোর মায়েরে বাপ। এরশাদ সিকদাররে লইয়া কী কইতাচোস। চারদিকে যে আরো কতো খুনী আছে দেহস না? দেন ভাই, যে যা পারেন দেনÑ খেলা দেখাইয়া রোজগার করে ভাই, চুরি চামারিতো করে না। দেখছেন তো ভাই সাইজ। বান্দরের লাহান। ও এইটা না করলে কে দেখাইবো বান্দরের খেলা? জনৈক প্রশ্ন করে- তুমি কি মিয়া শুদু এই সংসদ ভবন চত্তরেই বান্দর খেলা দেখাও। হ। যায়গা একটা বাইছা লইছো ভালোই। এইখানেই জমে ভালো! আরো একদিন দেখছি তোমারে, নাচন কোন্দন চালাইতাছো…. কিন্তু তোমার চাইতে অনেক ভালো নাচন কোন্দন জানে – যারা ভিতরে থাকে- বলে আলগোছে বিখ্যাত বিল্ডিংটাকে সই করে কিনা, আবছা আলোয় তা ঠাহর হয় না। কিন্তু অপ্রয়োজনীয়, অযাচিত, অপরিপক্ক কথার ভেতরেই তারা উদয় হয়। জনা তিনেক সংসদ পুলিশ। এরা চত্তরের নিরাপত্তা ও সিকিউরিটি কনসার্ন। পদাধিকার বলে সংসদের দেহরক্ষী কাম গার্জেন। এসেই তারা প্রথম সবক দেয়। ওই মাদারচোদ, কতো ইনকাম করলি আইজ হাউয়ার নাতি? নজরুল ইসলাম এই ভয়টাই করছিলো। এদের হাতে পড়লি আর ইনকাম নে বাড়িতে যাতি হবিনানে। সে ফিকির চিন্তা করে। ভং ধরে তিনটাকা এগিয়ে দেয় ওদের দিকে। রিএ্যাকশন হয় মারাত্মক। তারা কোন সুযোগ না দিয়ে নজরুল ইসলামের হাতের বান্দর-পেটানো লাঠিটা কেড়ে নিয়ে বান্দরের সাইজে ঠায়-ঠাস গোটাকয় বারি বসিয়ে দেয়। নজরুল ইসলাম ইরিব্বাপ বলে এমন একটা লাফ দেয় যেন সে কোনরকম জেটফুয়েল ছাড়াই আকাশে উড়ে যাবে। চোখের নিমেষে লম্বা কালসিটে পড়ে যায় তার পিঠে। যা ঢাকা থাকে ঢাকাশহরের অসংখ্য অসফলতার মতো কংক্রিট কফিনে। নজরুল ইসলামের এখন শীত লাগছে। আরে, অসময়ে মাঘ মাস ফলে উঠলো নাকি? হাইবাপ কী হলো কওদিনি? কী করিচি আমি, ছার?
– বান্দর নিয়া পার্লামেন্টে ঢোকা নিষেধ। তার উপরে রাইতের বেলা, হারামজাদা, তোর আইজকা খবর আছে। বাইরকর তোর সারাদিনের ইনকাম। বড় ছার আইজ এমনিতেই খেইপা আছে। এমপি হোস্টেলের পিছ্নের জানলা দিয়া নৌকায় পাড় হইতে গিয়া এক মক্ষিরানী পানিতে পইড়া গেছে। আইজ তোর বারোটা বাজামু হাউয়ার নাতি।

আরে কি মুশকিল, এইসবের মধ্যে নজরুল ইসলাম কেমনে ঢুকে গেলো? সে তো বান্দর নিয়া ঘোরে: মাগীর দালালিতো করে না। কিন্তু তাতে কি, জোরপূর্বক হলেও তাকে এই ঘটনার মধ্যে ঢোকানো হবে। এবং ঢোকানোর পর কাহিনীর কী দশা হয় তা আপনারা দেখতে পাবেন। আগামিকালের পত্রিকাগুলোতে একবার চোখ বুলালে কিংবা লেটনাইট টিভি কভারেজে দেখতে পাবেন সোম্বাদিক ভায়েরা যে নিউজ এনালাইসিস করে কিংবা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে কোনো টক-মিষ্টি-শো র টপিক হিসেবে এক বান্দর কাহিনী ঢুকে পড়াটা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু তাই বলে আপনাদের এহেন লোডশেডিংয়ের ভেতরে, অকার্যকর সংসদীয় চত্তরে বেমালুম ফেলে রেখে আমি তো ডুগ্গি দিতে পারি না। কাহিনীকে তো অন্তত একটা সম্পৃক্ততার যায়গায় নিয়ে যেতে হবে। তো গেহেরি বাত ইয়ে হ্যায় জনাব, নজরুল ইসলামকে ওইভাবে আগাপাশতলা মার খেতে দেখে সতের বছরের সহচর বান্দর আচমকা লাফিয়ে পড়ে সিকিউরিটি স্টাফদের কাঁধের ওপর উপর্যুপরি হিসি করতে থাকে।

বাপরে বাপ! বান্দরের মুত বলে কথা। কতদিন এর গন্ধ বয়ে বেড়াতে হবে বলা মুশকিল!

গোলাপগ্রাম

আমি জানি গোলাপগ্রামের কেউ

গোলাপের প্রেমে উন্মত্ত নয়!

রাশি রাশি নোট কেটে গোলাপের পাপড়ির স্বেদ

আর সতেজ পাতারা পরিপাটি।

 

যে প্রৌঢ়া বয়সিনী প্রতিদিন চারাদের

পরিচর্যা করে মাটি সার দেয়-

তুলে আনে উটকো আগাছা

তার চোখে প্রেম নেই -ভবিতব্য তাকে এই কাজে

ইশারা দিয়েছে- চকচকে কয়েনের চাষ!

কর্পোরেট পরিবেশে গোলাপেরও অর্থনীতি ভালো।

 

 

১৩/১১/২০২০, সেন্ট্রাল রোড।