আমি আবার আসবো

মেসেঞ্জারের আননোন মেসেজটা কবে থেকে জমা হয়ে ছিলো কে জানে। রূপ  সেটা ডিলিট করতে গিয়ে ভ্রূ কোঁচকালো। একটা ছবি, বেশ পুরোনো এবং ঝাপসা। দেখে মনে হচ্ছে সেকালের অটোমেটেড ক্যামেরায় তোলা। চারদিক রাউন্ডকাট করা ছবিটা মনে হয় দীর্ঘদিন সস্তা এ্যালবামে বন্দী ছিলো। কেউ সেটার ছবি তুলে পাঠিয়েছে। তিনজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে। তিনটা ছেলে, বয়স গোঁফ ওঠার আগে আগের। একজনের মাথায় হ্যাট। গলায় হাত দিয়ে একে অন্যকে ধরে আছে। একটা পুরোনো দালানের সামনে দাড়ানো তিনজন। ড়ানদিকে একটা তালগাছ তার অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছে। তিনটা মুখ দেখার জন্য রূপ ছবিটা বড় করলো। দেখলো। দুুজন অপরিচিত। তৃতীয়জনও। কিন্তু তার বুকটা ধ্বক করে উঠলো এজন্য, কারণ তৃতীয় ব্যক্তিটি সে নিজে!
এটা কিভাবে হয়? অবিকল তার মতো দেখতে মুখটা, তাও আবার একটা ছেলে। রূপ টের পেলো তার হাত কাঁপছে। আর কোনো ক্লু আছে কিনা দেখতে সে মেসেজের প্রোফাইল এ্যাড্রেসটা দেখলো। উদাসিন পথিক। বোঝাই যাচ্ছে ফেক আইডি।…  কে হতে পারে?

ছবিটা কোথায় কখন তোলা সে বুজতে পারছে না। এমন কোন ছবি সে তুলেছে বলে মনে পড়ছে না। সবচে বড় কথা ছবির ওই মুখটা একটা ছেলের। কিন্তু অবিকল তারই মতো দেখতে। এমনকি চোখের কাজলও তারই মতো। রূপের মাথা ঝিমঝিম করছে। একটা ফোন নম্বর দেয়া আছে ছবির নিচে। যেটা সে খেয়ালই করেনি এতক্ষণ। কিন্তু নম্বরটা টি এনটির মনে হচ্ছে। এই রাতে কি করা উচিত হবে? করে দেখবে নাকি? ভাবতে ভাবতে রূপ মোবাইল রেখে বাথরুমে ঢুকলো ব্রাশ করতে। আয়নায় নিজেকে দেখলো খুটিয়ে। বয়সের ছাট পড়ে যাচ্ছে কী? চোখের পাশে ক্লান্তির কালো র্ং। হবারই কথা। ওই ছবির মুখটার মতো ছিপছিপে একদিন সে ছিলো। হয়তো এখনো কিছুটা আছে। কিন্তু অমন ছেলেদের শার্টপ্যান্ট পড়ে গলাগলি বেধে ছবি তোলার ঘটনা তার জীবনে ঘটেনি শিওর।

তাহলে কে? আর বেছে বেছে উদাসীন পথিক তাকে এটা পাঠালো কী করে? কোন কূল কিনারা করতে না পেরে সে চিন্তাটা বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নিলো। আর তখনই তার যে কথাটা মনে পড়লো, সেটা শরীরের রক্ত জমাট বাধার জন্য যথেষ্ট!

ছবিটা ভাইয়ার। মানে মাঝের ওই পরিচিত মুখটা আসলে সে নয়, তার বড়ভাই আফজালের। মানে মনি র। মনি পড়তো ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা তখনকার কোন শিক্ষা সফরের হবে হয়তো। ছোটবেলায় সে নাকি দেখতে রূপের মতোই ছিলো। মেয়েলি ভাব ছিলো ভাইয়ার। তাকে কারা যেনো মেরে ফেলেছিলো। কিংবা সেটা আত্মহত্যা। পুলিশ যা বলেছে। ভাইয়ার কি জানি সমস্যা ছিলো। রূপ তখন অনেক ছোট। ভাইয়াকে তার মনেও নেই ভালো করে। রেললাইনের ধারে তার লাশ পাওয়া গেছিলো, ক্ষতবিক্ষত। চেহারা চেনা যাচ্ছিলো না। কেডস দেখে শনাক্ত করে পোস্টমর্টেম ছাড়াই কবর দেয়া হয়। রুপ এসব বড় হয়ে জেনেছে।

বিছানায় শুতে গিয়ে সাহস করে সে ওই নম্বরটায় কল দিয়ে ফেললো। তিনবার রিং হবার আগেই কে যেনো ধরলো। তারপর ফোপানির আওয়াজ শুনতে পেলো রূপ। কে কাদছে? কলটা কেটে পি পি করতে লাগলো কিছুক্ষণ। সে রাতে রূপ আর ঘুমোতে পারলো না।

(অসমাপ্ত)

অন্যদের জানিয়ে দিন