দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে পনের ফুট রাস্তার ব্যবধান- কিন্তু তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাদের বন্ধুত্বে। একজন সাড়ে ছয় অন্যজন পাঁচ। খেলার সিস্টেম হলো দুজন দুজনকে একটা করে খেলনা বেলকনি থেকে অন্যজনকে দেখায়। তাতেই তাদের আনন্দ। বছর তিনেক ধরে চলছে এসব। দুটি পরিবারের মধ্যে সখ্য না থাকলেও তাদের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই। তারা এমনকি একে অন্যের নাম পর্র্যন্ত জানে না। জানার প্রয়োজনও বোধ করেনি কখনো। উভয়ে ‘আপু’ বলে সম্বোধনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। স্কুল থেকে ফিরেই- যে আগে ফেরে- সে অ্ন্যজনকে চেঁচিয়ে ডাকতে থাকে –আ-পু! অপরদিক থেকে আপুর আবির্র্ভাব হলে চলে সারাদিনের ফিরিস্তি- কে কী দেখেছে, করেছে খেয়েছে ইত্যদি। আপু, আমি না আজ বর্র্ণমেলায় গিয়েছিলাম, আপু আমি না ‘ব্যস্ত’ ছিলাম কাল। এরপর শুরু হয় খেলা বিষয়ক নির্দেশনা: আপু তুমি ডাল রান্না করো, আমি ভাত। মাঝে মাঝে চৌকশ হিন্দিতেও বাতচিত চলে। মুঝে ভুখ নেহী হ্যায়, ও মর জাওয়া ইত্যদি। লেটেস্ট ছবির গানগুলো তাদের কাছ থেকেই শোনা হয় আমার। বাসায় থাকলে আমি অতি সন্তর্র্পনে লক্ষ করি তাদের গতিবিধি। উল্লাসে চিৎকারে দুপুরের ঘুমের বারোটা বাজে, কিন্তু বিরক্ত হই না। খেলার মাঠ, সঙ্গীসাথী নেই, তো এ ছাড়া এই পিচ্চিদুটো করবেই বা কী? এভাবে যে বন্ধুত্ব হয়, খেলা করা যায়- এই ব্যপারটা ওদের না দেখলে আমার মাথায়ই আসতো না!
ইদানিং একটু ভয়ে ভয়ে থাকি। কারণ, বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তুতে কিছুটা বৈচিত্র্য এসেছে। পারিবারিক বিষয়, বাবা মা ইত্যাদি নিয়েও তারা একে অন্যের সাথে গভীর মতবিনিময় করে। মুশকিল হচ্ছে, ঘরের সিক্রেসি আউট হয়ে যাচ্ছে। বাসায় কী রান্না হচ্ছে- তা আমার চেয়ে এলাকাবাসী আগে জেনে যাচ্ছে- আরও কী কী বলা শুরু করবে- তাই নিয়ে একটু চিন্তিত আছি!…