বাঘ , Oil on canvas. 8 x 8 inch. June 2023
Oil on canvas. 8 x 8 inch. June 2023
গুম, Oil on canvas. 5 x 4 inch. June 2023
ঝুঁট: JHOOT [Adjective] – False, [Noun]- Waste fabrics
Oil on canvas. 22 x 32 inch. October 2021
কামারশালা
Oil on canvas. 16 x 14 inch. 2021
গ্রাস
ক্যানভাসে তেল রং। ২৪ ইঞ্চি x ৩৬ ইঞ্চি
শক্তিরূপিণী
একমাইড্ডা, দোমাইড্ডা, তেমাইড্ডা ইত্যাকার শব্দগুলি ছোটোবেলায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো। কেননা এলাকার আশেপাশে যতোগুলো দুর্গাপ্রতিমা গড়া হতো সবগুলি নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করা একটা দায়িত্বের মধ্যে পড়তো। ঘন্টার পর ঘন্টা পালদের হাতের কাজ মগ্ন হয়ে দেখতাম। মাটি দিয়ে বিষধর সাপ ফনা তুলে অসুরকে কামড়ে উদ্যত- সেটা ফুটিয়ে তুলতে কী করে একপ্রস্থ পুরোনো সুতিকাপড় দিয়ে পুরো সাপের শরীরটা মুড়িয়ে নেয়া হতো সেটা দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি! আর কোন্ মণ্ডপে সিংহ কতো নিবেদিতপ্রাণ হয়ে ভয়ংকরভাবে কামড়ে ধরেছে- সেসবের অভিব্যক্তি মগজের কোষে কোষে বাইনারী পদ্ধতিতে স্মৃতিবদ্ধ হয়ে আছে এখনো। চোখ বুজলে কল্পনায় এখনো দেখতে পারি কারিকর বিড়ির পূজা মণ্ডপে পাহাড় থেকে নেমে আসছেন দুর্গা, কিংবা ভাটিখানায় নাটকীয়ভাবে কেবল কর্তিত মহিষের ঘাড় ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছেন তাচ্ছিল্যের হাসিমুখে শিং গজানো অসুর। পুরো বিষয়টি যে রূপকার্থে সাজিয়ে পরিবেশন করা, সেসব বোঝার বয়স তখন হয়নি। পূজার আকর্ষণ তখন কারুকলা শেখা আর মহালয়া শোনাতেই তৃপ্ত। আহ্ দপ্তরখানা আর সদররোডে কী যত্ন নিয়েই না মণ্ডপসজ্জা করা হতো! থিমের কনসেপ্ট তখনো আসেনি।
তবে একটা বিষয় ছোটোবেলা থেকে বরাবরই অমীমাংসিত ছিলো, তা হলো, যুদ্ধরত অবস্থায় সবকিছু এতো স্ট্যাটিক থাকে কী করে? আয়ূধের আস্ফালনে উপস্থিত সকলের অবস্থান তো ব্লেন্ডেড হয়ে যাবার কথা! আমার দুর্গা-বন্দনা তাই কেবল মৃন্ময়ীই নয়, গতির্ময়ীও বটে!
সকল অশুভের বিনাশ হোক। জয় হোক মনু্ষ্যত্বের।
শক্তিরূপিণী। মাধ্যম – মাটি। সেপ্টেম্বর ২০২১
LADY AND THE HANGING ORCHIDS
ক্যানভাসে তেল রং, ১২ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চি সেপ্টেম্বর ২০২১
ও রেবতী ও রেবতী একটুখানি আলো।
মনহরণ চপল চরণ – দেখাচ্ছে বেশ ভালো
ভালোর সঙ্গে মিলিয়ে দিলাম বিষম মরীচীকা!
ও রেবতী মস্ত আকাশ – নম্র নিহারীকা।
মি: গণ্ডার
গণ্ডারকে গোসল করানো সহজ কাজ নয়, কারণ তারা জলহস্তী নয়, এমনকি হাতিও নয়। গণ্ডার হলো গণ্ডার! তো গত দুদিন ধরে আমি আমার গণ্ডারকে গোসল করাচ্ছি। ডাইনিং টেবিলের ওপর। যা নোংরা থাকে গণ্ডার, কী বলবো! রাগতভাবে বললাম, ‘তোমাকে কিন্তু আমি এভাবে রোজ রোজ স্নান করাতে পারবো না, আমার আরও কাজ আছে, ওকে?’ আমার কথা শুনে স্ত্রী ভুরু কুঁচকে তাকালেন। ভাবছে পাগল হয়ে গেছি কিনা। নাহলে গণ্ডারের সাথে, তাও আবার মাটির- তার সাথে কেউ কথা বলে?
কিছু কিছু প্রাণী সৃষ্টি করতে গিয়ে বিধাতা বেশ তাড়াহুড়া করেছেন বলে আমার ধারণা। তাদের চোখ নাক কান কোথায় বসাবেন, সে ব্যাপারেও বেশ কনফিউজড ছিলেন মনে হয়। দুদিন ধরে গণ্ডার স্টাডি করতে গিয়ে আমারতো আক্কেল গুড়ুম। কোথায় নাক আর কোথায় কান? মাঝখানে ক্রিকেট পিচের ব্যবধান! এইরে! একথা শুনে পশুপ্রেমীগণ আমাকে আবার বডিশেমিংয়ে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলবে নাতো!
জোক্স এপার্ট, আপনাদের জন্য কুইজ: পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট প্রাণী কে?
কে আবার? গণ্ডার!
কেনো?
কারণ গণ্ডার সারাবছর বিশেষ ডিজাইনের চামড়ার কোট পড়ে থাকে!
গণ্ডার । ১৯ ইঞ্চি বাই ৯ ইঞ্চি। মাধ্যম- মাটি। জুলাই ২০২১
বুদ্ধং শরণং
বাড়ির অদূরেই ছিলো শংকরমঠ। শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবেই নয়, স্বদেশী আন্দোলনেও এই স্থাপনার ছিলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেসময় ধর্মীয় কার্যক্রমের আড়ালে সত্যাগ্রহের কর্মীরা মোটা খাদির ধুতিপাঞ্জাবি চাদর জড়িয়ে এখানে জড়ো হতেন, বৃটিশ খেদানোর বিভিন্ন পরিকল্পনা করতেন ছদ্মবেশের আড়ালে! মঠের তিনটি চূঁড়োর মাঝখানেরটা বড় – যা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ত্রিশুল বাগিয়ে আকাশের দিকে তাক করা। তিনটি প্রকোষ্ঠের মাঝখানে শিবলিঙ্গ আর বাঁ দিকেরটায় ছিলেন শ্বেতপাথরের প্রমাণসাইজের নিরেট বুদ্ধদেব। ন্যাড়া মাথা, পদ্মাসনে শান্ত-স্থির আর হাতের ভঙ্গীতে বরাভয়। দেখলে ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা জাগতো মনে! বহুকৌণিক অথচ বৃত্তাকার সেই কামরার দরজা সাধারণ সময়ে বন্ধই থাকতো। আমরা চারদিকের বাহারি সরু লম্বা জানালা দিয়ে দেখতাম ভেতরে বসে একমনে ধ্যান করছেন অমিতাভ। বিশেষভাবে নজরে পড়তো তাঁর দীর্ঘ কর্ণযুগল যা প্রায় কাঁধ ছুঁইছুঁই! একটা গোটা পাথরের চাঁই কেটে তাঁকে বানানো হয়েছে। মসৃণ, নিখুঁত ওরকম বিগ্রহ বরিশালে তো নয়ই, সারা দেশে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা সন্দেহ।
সে সময় মনে হতো তিনিও হিন্দুদেরই কোনো দেবতাবিশেষ। বড় হয়ে বুঝেছি তাঁর অনুসারীগণ আলাদা ধর্মীয় বিশ্বাস পালন করেন। কলেজে দর্শন পড়তে গিয়ে তাঁর আর্যসত্য মুখস্থ করতে হয়েছে। হঠাৎ একদিন শুনলাম, কে বা কাহারা রাতের আঁধারে অতো ভারী বিশাল সেই বুদ্ধমূর্তি হাওয়া করে দিয়েছে। পুলিশ কেস হয়েছিলো মনে হয়। লোকে বলাবলি করতো প্রত্নপাচারকারীরা সেটা হয়তো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে!
তো এতদিন বাদে আমার করোটিতে জমে থাকা ধ্যানীবুদ্ধ মৃন্ময় অবয়বে আবির্ভূত হলেন! এটি একেবারেই শংকরমঠের সেই বুদ্ধের অনুরূপ নয়। আমি যেভাবে বুদ্ধকে দেখতে চেয়েছি, সেভাবেই নির্মাণ করেছি। ইম্প্রোভাইজ করার চেষ্টা করেছি তাঁর অভিব্যক্তিকে। এই স্টাডি চলমান। আরও কয়েকটি মাধ্যমে আমি তাঁর মুখাবয়ব নির্মাণের চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে।
বলে রাখা ভালো, এহেন মৃৎকর্ম আমার জীবনে এই প্রথম।
জুলাই ২০২১
অপেক্ষা ২০১৮। তেল রং, ক্যানভাস।
শখের বশে
২০১৯ এর শেষদিকে রোহিঙ্গা রেসপন্স অপারেশনে আমাকে কক্সবাজার থাকতে হয়েছিলো একটানা প্রায় পাঁচমাস। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও উইকএন্ডগুলো ছিলো একঘেঁয়ে। মাঝে মাঝে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে একা একা পায়চারী করতে গিয়ে চোখে পড়লো ঢেউয়ের সাথে ভেসে আসা বেলেপাথরের নুড়ি আর পুরোনো শেকড়বাকড়ের ওপর। উইন্ডচিটার আর প্যান্টের পকেট ভর্তি করে হোটেলে নিয়ে আসতাম কুঁড়িয়ে পাওয়া সেসব রত্ন! তারপর সেগুলো সাবানপানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে চলতো বিভিন্ন গবেষণা। আমার নিঃসঙ্গতাকে সৃষ্টিশীলতায় ভরিয়ে দেয়া সেসব কাজের দুয়েকটা নমুনা এখানে দিলাম।
তবুওতো প্যাঁচা জাগে…
রানা প্লাজা
ইয়াহিয়া ১৯৭১