আলী আশরাফ অশ্রু! নামের ভেতরে যার কান্না লুকানো- সেই লোকটি কিন্তু ছিলেন ভীষণ হাসিখুশি। আমাদের চেয়ে ২/৩ বছরের বড় হবে বড়জোড়- কিন্তু চান্স পেলেই আমাদের মতো পিচ্চিদের কাছে যথেষ্ট মুরুব্বীআনা করতেন তিনি। অত্যন্ত সুশ্রী, গৌরবর্র্ণ, উন্নতনাসার অশ্রুভাইকে দেখলে হিংসা হতো! অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার পরেও তিনি ছিলেন আমাদের সম্পত্তি- মুক্ত বিহঙ্গ খেলাঘর আসরের। নাটক-শরীরচর্চা-বিজ্ঞান ক্লাব আর মারামারি- সবকিছুতেই তার দক্ষতা মানোত্তীর্র্ণ ছিলো। তাঁর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো হঠাৎ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেতেন। অনেকদিন বাদে অশ্রুভাইকে আবিষ্কার করতাম- তারুণ্যের নতুন কোন ডাইমেনশন নিয়ে ‘দিগ্বিজয়’ করে ফিরেছেন হয়তো। অত্যন্ত পরিপাটি একটি পরিবারের তিনি বড় ছেলে- কিন্তু সে অনুযায়ী দায়িত্বের বোঝা তাকে কখনো বিচলিত করেছে বলে মনে হতো না। কী এক খেয়াল চাপলো- অশ্রুভাই তখন খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের একনিষ্ঠ কর্র্মী- হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলে পরে জানা গেলো তিনি পশ্চিমবঙ্গে গেছেন নাটক নিয়ে পড়তে। বছর দুতিনেক পরে অশ্রুভাই আবার নতুন খোলসে ফিরে এলেন- এবার আর মুরুব্বীআনা নয়- আমাদের সাথে বয়সের পার্র্থক্য ঘুচিয়ে দিব্বি সিগারেট অফার করছেন- আর রাজ্যের হাসি-তামাশায়-মধ্যমনি হয়ে উঠেছেন। নাটকে অভিনয় আর নির্দেশনা- দুটোতেই অশ্রুভাই আমাদের দিল জিতে নিলেন অল্পতেই। তারপর আবার হঠাৎ করে অশ্রুভাই নেই হয়ে গেলেন…ভেবেছিলাম তিনি আবার যথারীতি তার অন্তর্র্ধানের নিয়মানুযায়ী পুনরায় ফিরে আসবেন। কিন্তু অশ্রুভাই ফিরলেন না। কোনদিনই না। শুনেছি কোলকাতার একটি নামকরা নাট্য-সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। তারপর কারা জানি তাকে মেরে ফেলেছে- কোন এক বড়লোকের কন্যার সাথে (অন্য ধর্মের হয়েও) হৃদয়জ সম্পর্কে জড়ানোর অপরাধে। …এ সবই শোনা শোনা কথা। সত্যতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তাঁর পরিবার থেকে অনেক চেষ্টা করেও অশ্রুভাইয়ের এমনকি লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানি না অশ্রুভাইয়ের কথা মনে করে আজও সেই নাম না জানা মেয়েটির চোখে অশ্রু ঝরে কিনা!