কাব্যগ্রন্থ। একুশে বইমেলা ২০২৩
কবিতার এই ব্রীজটি পেড়িয়ে আসার পর
‘কাঁচপুর ব্রীজ পার হয়ে এলাম
অ নে ক দূ র!
আমরা তবু যাওয়ার ব্যাপারটা
ঠিক ঠিক জানাতে পারি নি!’
ব্রীজটি পার হয়ে আসার পর স্মৃতির তর্পণে জমা হতে থাকে পেড়িয়ে আসার গল্প, কিন্তু যাওয়ার গল্প কী বাদ পড়ে যায়? যেমন তার সঙ্গে দেখা করে চলে আসার পর, যাওয়ার গল্প মনে রাখে কেউ? এই পেড়িয়ে আসা ও পাড় হতে যাওয়ার মধ্যে জীবনের যে এক অনির্বচনীয় সাঁকো রচিত হয়, তার অভ্যন্তরে এমন এক মেটাফোরের জন্ম হয়, যে জন্ম আরও এক বিষাদের সাঁকো তৈরি করে— এ কবিতাগুলো হয়তো এমনইÑ পেড়িয়ে আসতে আসতে পাড় হতে যাওয়ার বেদনা মনে করিয়ে দেবে, আপনার, আমার, তোমার ও আমাদের অন্তরাত্মায়, আর জেগে থাকবে তার শিয়রে নিতান্তই একটি গলার তিল!
অনেকদিন পর কয়েকটি কবিতা আমাকে তুমুল বেদনা দিল— ধনছে গাছের মত। যে গাছকে নিয়ে আমরা শুধু উপহাসই করেছি। আমাদের অনেকের উপলব্ধিতে সে গাছের বেদনাকে জানি না। একটি ধনছে গাছের সঙ্গে দেশভাগের গল্প কিভাবে জড়িয়ে পড়ে। এপাড় থেকে চলে যাওয়া আর ওপাড় থেকে চলে আসার এই সব বিষণ্ণ ভূমিকা তার ‘ভাগ’ কবিতা। যেভাবে একটা অজানা ফুল ম্লান ফোটে, আর আমরা যেভাবে এড়িয়ে যাই, কিসের জন্য, কার জন্য? এই প্রশ্ন চিরকাল অমীমাংসিত থাকে, তার নিঃশব্দ দহন আছে এ কবিতায়।
আরও আছে ট্রপোসীমার সাত ছন্দÑ এধরণের কবিতা আমি আর বাংলায় পড়িনি এর আগে। কখনো তাকে দেখি নিথর জলের টাটকিনা মাছের মত। কখনো দূরে ব্যাকুল সাক্সফোনের স্বর হয়ে বাঁজে। তার বুকে কেন তেজকটালের চাপ, পাহাড়ে কেনো এক মামার্ যুবক নৃত্ত্ব সন্ধ্যানে, ওয়াহিন মেয়ের প্রান্তে কেনো সব সুখ? একাত্তরের কবি, বেশ্যা কেনো তার কবিতায় ভাঁড়? এই তো, এই সব মিলেই এক নতুনের কবিতার স্বর জেগে উঠছে ব্রীজটি পেরিয়ে আসার পর।
আলফ্রেড খোকন
প্রকাশ করেছে: সংবেদ
ISBN 978-984-96322-9-0
গল্পগ্রন্থ। একুশে বইমেলা ২০০৯
তারপর রেহেনুমাকে কতো পুরুষের কাছেই না ছুটতে হয়েছে। পুরুষের পাশে থেকে, সহকর্মী, সহযাত্রী হয়ে, সাহায্যের বারতা শুনিয়ে কিংবা প্রতিযোগিতায় সে বহু বহু পুরুষকে পিছে ফেলে কেবল পেছন থেকে সামনে – সামনের কাতারে এসে যোগ্যতম স্থানটিতে বসেও দেখেছে পুরুষ কেবলই পুরুষ।
দেখো, যদি যোগ্য হও পুরুষ তোমাকে মাথায় তুলে নাচবে। অযোগ্য হলেও। কিন্তু সমঅধিকার কেউ দেবে না। শোষণ-বঞ্চনায় পায়ের নিচে, আদরে আধিখ্যেতায় মুকুট-মনি ছাড়া নারীকে কে কবে পাশাপাশি ভাবতে পেরেছে ? যতোটা পারবে চেখে নেবে, চেটে নেবে ছিনিয়ে নেবে – তুমি ফোঁস করলে লেজ গোটাবে, তোমার তেজস্বীতায় বাহবা নইলে শ্রদ্ধা জানাবে – বন্ধু হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মোকাবেলা, ভালোবাসায় পূর্ণ করে দেবে না কখনো পুরুষ। এ পুরুষকে রেহেনুমা ভালোই চেনে। চিনেছে এতোকাল!
প্রকাশনা: ইন-ডেপথ্ পাবলিকেশন্স
ISBN: 984-300-003130-5
গল্পগ্রন্থ। একুশে বইমেলা ২০০১
তুহিন শব্দ দিয়ে শব্দের বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেন, আবার জলের মতো সহজ করে বিভেদের নিষ্পত্তি করতেও জানেন, ফলে অনুভূতির গাঢ় আচ্ছন্নতা না থাকলে তার গল্পের চারিদিকে নিষ্প্রাণ শাদা শক্ত খোলস বলে মনে হবে।
তুহিনের গল্পে স্বপ্ন আর কল্পনা বাস্তবে দুই ভাইবোন মিলে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানমনষ্ক এক পৃথিবীর ছোটগল্প হয়ে ওঠে। ফলে কেবল কর্নয়া, যা দৃষ্টিক্ষমতার জন্য দরকারী – এমন চোখ দিয়ে তুহিনের গল্প পড়ার খুব অসুবিধা আছে। এর জন্য দরকার তৃতীয় সেই চোখ – যাকে আমরা অন্তর্চাখ বলি।
সোমপ্রকাশ বাড়িতে নেই এই গল্পগ্রন্থের লেখকের আত্মপ্রকাশ দ্বাবিংশ শতকের অলেখা গল্পগুলির জন্ম দিতেওতো পারে!
প্রকাশনা: শ্রাবণ
ISBN: 984-813-020-9