Blog

কবিসভা

ট্রামের ক্যাচারে মিলুদার স্থুল শরীরটা 
আধাআধি সেঁদিয়ে যাবার পর
সূক্ষ্ম বিধাতা হেসে উঠলেন!
জাতি তখন বিকেলের সিয়েস্তা সেরে 
কেবল উঠেছে! ঘুম ঘুম মদালসায়
জর্জরিত ল্যান্সডাউনে শেষ বিকেলের রোদ
কর্পোরেশনের তারে তারে 
অনিত্যতায় তখনো ঝুলছে। 
সূক্ষ্ম বিধাতা বুঝলেন-
এ জাতির কপালে খারাবি আছে;
তাই তিনি অচীরেই মিলুদাকে মুক্তি দিলেন।
চরম বিব্রত এক নির্ভেজাল জীবন-
যা দোয়েলের ফড়িংয়ের স্বাদ পেতে চেয়েছিলো
কার্তিকের কুয়াশার মতো
শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের 
লোহার বিছানা থেকে মুক্ত হলো! 

সূক্ষ্ম বিধাতা চিতায় আমকাঠ চড়াতে চড়াতে 
উদ্বাস্তু পেঁচানীকে বললেন- হে প্রগাঢ় পিতামহী, আরও একশো বছর তোমাকে এই শোক সইতে হবে; আরও একশো বছর শালা সব কবির ভাত মেরে নিজেই একটা কবিসভা হয়ে উঠবেন!
১৯ জুলাই ২০২১, রাত ৪টা

জিরানি

আমাদের বাসার সামনে ধ্যারধেরে রেইন্ট্রিগাছে গাছে-মৌমাছি ভুল করে বাসা বেঁধেছিলো। ভুল করে বলছি এই কারণে যে ওরা বেশিদিন টিকতে পারেনি। আর সাধারণত এ ক্ষেত্রে যা হয়- বিভিন্ন সুসারিস্টিসন তৈরি হয়ে যায়। মৌমাছির নাকি ভালোমন্দ বিবেচনাবোধ প্রখর। যেখানে তারা বাসা বাঁধে- সেই সংসারের সর্র্বনাশ করে ছাড়ে- এটা আমার মা-জননী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি আশেপাশের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আরো বিস্তারিত জ্ঞান নিলেন। বাড়ীর ঠিকা-কামলা সিরাজমেয়া তাঁর গভীর পর্র্যবেক্ষণশক্তি ব্যবহার করে রায় দিলেন- এগুলা জিরাইন্না পোক্! মানে হলো চলার পথে ট্রানজিট হিসেবে ওরা রেইন্ট্রিগাছে আশ্রয় নিয়েছে- এরপর দেখেশুনে ভালো কোনো ফ্লাট পেলে তাতে উঠে যাবে। তা জিরানো হোক বা স্থায়ী- ওদের কর্র্মকাণ্ড দেখতে কিন্তু বেশ লাগছিলো আমার। বুদ্ধি আছে ওদের। এমন একটা হ্রসি-কারের মত বাঁকানো আর ওঠা-অসম্ভব ডাল ওরা বেছে নিয়েছে- এমন উচ্চতায়- যে সহজে কেউ ওদের টিকির নাগাল পাবে না। আমি ওদের ওড়াউড়ির ব্যস্ততা আর ফুলে ফুলে বিচরণ লক্ষ করতাম। প্রচুর গাঁদাফুল ফুটতো বাসায়। ওরা ফুলে ফুলে আমের মুকুলে ঘুরে মধু নিয়ে জমা করতো। তিনমাস হবার পরেও যখন ওদের জিরানো শেষ হলো না, তখন আর এক বিশেষজ্ঞ তাঁর মতামতে জানালেন- মৌ কাটার সময় হয়েছে। (প্রকাশ থাকে এই যে আমাদের বাড়ীতে এ ধরণের ‘বিশেষজ্ঞ’ ও ‘দক্ষ কাজের লোকের’ অভাব ছিলো না- তারা পারতেন না এমন কোন কাজ নেই!) তো ঐ সময় বাসায় কী যেন রিপেয়ার করার জন্য রাজমিস্ত্রি নেয়া হয়েছে। (মিস্ত্রি আমাদের বাড়ীর কমন আইটেম, সারা বছর কিছু না কিছু পরিবর্র্তন, পরিবর্র্ধন- জোড়াতালি লাগাতার চলতো- এ বিষয়ে অন্যত্র বলবো)। স্বাভাবিকভাবেই মৌমাছি সংক্রান্ত এই আলোচনায় তাঁরা তাঁদের বিশেষজ্ঞ-মতামত দিলেন। এবং এহেন ‘মৌ-ভাঙার’ কাজ যে তারা ক-ত্তো করেছে, তার ইয়ত্তা নেই। মা-জননী ওদের বাখোয়াজে কনভিন্সড! খড় আর আমপাতা বেঁধে একটা নুড়ো বানানো হলো যেটা জ্বালিয়ে ধোঁয়া-সঞ্চার করে মৌমাছিদের তাড়ানো হবে। দেখলেই অকর্র্মন্য মনে হয় এমন একটি লেবারকে এই কাজের জন্য মনোনীত করা হলো। সে লুঙ্গী কাছা দিয়ে, মাথা-মুখ গামছায় বেঁধে হাতে একটা গামলা নিয়ে রেডি। গামলায় করে নাকি পুরো মৌচাকটা একবারে কেটে নিয়ে সে গাছ থেকে নামবে। আর এমন বাঁকানো ডালে চড়া নাকি তার বাঁ হাতকা খেল। তো অবশেষে মৌচাকের চারফুট দুরে থাকতে সে মৌমাছিদের প্রথম এ্যাটাকের সম্মুখীন হয়। জানালা দরজা বন্ধ করে রুদ্ধশ্বাসে বাসার ভেতরে আমরা কোনক্রমে দেখতে পাই- ব্যাটা একহাতে নুড়ো দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছে আর অন্যহাতে ধারালো দা দিয়ে মৌচাকের কিছুটা কাটতে সক্ষম হয়েছে- কিন্তু ব্যপক আক্রমনে যে কোন সময় গাছ থেকে পড়ার উপক্রম। কিন্তু সে পড়লো না। বিনিময়ে মধুর গামলাটা পড়ে গেলো। নিচে একটা নারকেল গাছের চারা ঐ মধুতে স্নান সেরে নিলো! মৌমাছিরা রাগে-দুঃখে গনগন আস্ফালন করছিলো। হারামজাদা- মধু বাদ দিয়ে ওদের কচি কচি ছানাদের কোয়াটারগুলো কেটে নিয়েছে।

পরদিন সকালেই মৌমাছিরা হাওয়া হয়ে গেলো। বাঁকানো ডালে ঝুলে রইলো শুধু হাড়ের মতোন সাদা-মধুহীন- মৌমাছির চাক। অনেকদিন ঝুলে ছিলো- ওদের ঘৃণার প্রতিকল্প হয়ে!

15Ferdoushi Mukti, Avi Chatterjee and 13 others8 Comments4 SharesLikeCommentShare