ভিটামিনে ভরপুর
চরিত্রসমূহ:
গাঁজর
পেপে
কাঁচামরিচ
মিষ্টি কুমড়ো
কচুশাক
টমেটো
স্বামী
স্ত্রী
তথ্য সংগ্রহকারী (পুরুষ)
তথ্য সংগ্রহকারী (নারী)
—————————
সব্জিরা সকলে হাত ধরাধরি করে নাচতে নাচতে মঞ্চে এসে গান ধরবে:
চিনতে তোমার কোনদিনও হয়না যেনো ভুল (২)
সতেজ করি দেহ- আবার রোগ করি নির্মূল (মোরা) (২)
মা ও শিশুর চোখের জ্যোতি, বাড়াই-
দেহে আনি পুষ্টি অতি (২)
ভিটামিনে ভরপুর আমরা ভারী ইউজফুল (২)
সতেজ করি দেহ- আবার রোগ করি নির্মূল (মোরা)
চিনতে তোমার কোনদিনও হয়না যেনো ভুল (২)
সতেজ করি দেহ- আবার রোগ করি নির্মূল (মোরা) (২) ….*
*গানটির সুর ‘ দয়াল বাবা কেবলা কাবা আয়নাল কারিগর, আয়না বসাইয়া দে মোর কলবের ভিতর’ -এভাবে গাওয়া যেতে পারে।)
(সব্জিরা সকলে নাচের তালে তালে মঞ্চের বাইরে চলে যাবে। অন্য দিক থেকে একটি লোক অসুস্থতার ভঙ্গীতে মঞ্চে প্রবেশ করবে। তার একহাতে ঔষধপত্রের বোঝা, আর অন্যহাতে হরলিক্স, গ্লুকোজ জাতীয় বিভিন্ন বোতলের পোটলা। লোকটি এগিয়ে এসে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলবে:)
স্বামী : উহ্ এতো ডাক্তার কবিরাজ দেখাইতেছি তবুও শরীলে দুর্বল পাই না। কি যে করি। দুই দিন পরপর পেট খারাপ, মাথাব্যাথা, বুকে ব্যাথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, মাথা ঝিমঝিম করে, চোখে কম দেখি, মাথা চক্কর দেয়- আর ভালো লাগে না। কি হইছে কে জানে ? মনে হয় ফিনিশ হইতে আর বেশি বাকী নাই। (ভেতর ঘরে দিকে তাকিয়ে ডাকবে) বউ ও বউ,
স্ত্রী: (নেপথ্যে) কী হইছে, চিল্লাইতেছেন ক্যান ?
স্বামী: আমারে এট্টু হরলিক্স বানাইয়া দেও, বাজারের দোকানদার কইছে এইডা খাইলে নাকি গায়ে শক্তি হইবো। আর যতো বেশি ভিটামিন ট্যাবলেট খাওন যায় ততোই নাকি শরীলে তাকত বাড়ে।
(ভেতরে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়, খুন্তি হাতে স্ত্রীর প্রবেশ)
স্ত্রী : এই, এই, আপনের আন্দাজটা কী, কন তো ? খালি যে ওই হাতুইড়া ডাক্তারগুলার পিছে পিছে ঘোরেন, তাতে কোনো কাজ হয় ?
স্বামী : (খেকিয়ে উঠে) তাইলে কি করুম? অসুখ হইয়া হার্টফেল করুম ?
স্ত্রী : যে অবস্থা চলতেছে তাতে হার্টফেলের আর বেশি বাকী নাই। কতো কইরা কইলাম স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়া পাশ করা ডাক্তার দেখাইয়া আসেন, তা না। খালি গণ্ডায় গণ্ডায় ট্যাবলেট গিলবেন…
স্বামী : আরে ধুত্তোর, অসুখ হইলে অষুধ খাইতে হইবো না ?
স্ত্রী : খাইবেন তো ঠিকটা খান। ঐ আলতু ফালতু অষুধ আর হরলিক্সের বোতল নিয়া ঘুরলে আপনের রোগ সারবো? কতো কইরা কই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন। আর ওই বদ নেশাগুলা ছাড়েন, তাতো হুনবেন না।
স্বামী : দেহো বউ, তুমি আমারে আর যা-ই কও, নেশাখোর কইয়ো না।
স্ত্রী : ক্যান, নেশা করেন না বুঝি আপনে ? সারাদিনে এই যে এত্তো এত্তো জর্দা দিয়া পান খান, হেইগুলা কী ?
স্বামী : আরে ওইটা কি আর নেশা নাকি, ও তো এমনি একটু খাই…
স্ত্রী : থাউক আর কৈফিয়ত দিতে হইবো না। আমি যাই, মেলা কাম পইড়া আছে। ঘরে যে কত্তো কাম থাহে, হেইডা পুরুষমানুষ আপনেরা চাইয়াও দেখেন না।
(স্ত্রী ভেতরে চলে যায়। দুজন ডাটা কালেকটর প্রশ্নপত্র, মোয়াক টেপ ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ করে)
মহিলা: আপা, বাসায় আছেন নাকি কেউ ?
স্বামী : কে আইলো আবার ? কেডা ?
পুরুষ : আমরা এসেছি হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল থেকে পুষ্টি জরিপের কাজ করতে…
স্বামী : হেইডা আবার কি জিনিস ?
পুরুষ: দেশের মানুষের স্বাস্থ্য,পুষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাচাই করতে আমরা প্রতি দুই মাসে….
স্বামী : স্বাস্থ্য…? ও আইচ্ছা আইচ্ছা, আর কইতে হইবো না। দেখেন তো ডাক্তারভাই, আপা, আমার স্বাস্থ্যটা বেজায় খারাপ…
পুরুষ : ইয়ে, মানে- আমরাতো ডাক্তার নই, আর তাছাড়া…
স্বামী : তাছাড়া কী ? আমি একজন অসুস্থ মানুষ, জীবনের উপর দিয়া লাইফ বইয়া যাইতে আছে…
মহিলা : দেখুন, আপনাকে নয়- আমরা আপনার পরিবারের সাথে একটু কথা বলতে চাই…
স্বামী : পরিবার ? মানে ওয়াইফ ? সে এখন বিজি আছে, যা কওয়ার আমারে কন।
মহিলা : কিন্তু তাতে তো হবে না।
স্বামী : হইবো না মাইনি। আমি ফ্যামিলির হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট, আর আমার কথায় হইবো না ?
মহিলা : আমরা আসলে মায়েদের সাথেই আলাপ করতে চাই…
স্বামী : হইবো না। আমার ফ্যামিলি বাইরের মানষের সাথে কথা কইবো না।
(স্ত্রীর প্রবেশ-)
স্ত্রী : কইবো না মানে কী !? আপনের কথায় চলবো নাকি দুনিয়া ?
স্বামী : হনুফা তুমি ভিতরে যাও।
স্ত্রী : ক্যান ? মাইয়া মানষের মতামত দেওয়ার সময়ই খালি ভিতরে যাইতে হইবো ? বাড়ির সব কাজ করি আমি। ইনকাম করি আমি। হাঁসমুরগী, খেতখামারের হগল কাম আমার করতে হয় আর মতামতের সময় আমার কোন দাম থাকবো না কেন ?
স্বামী : এতো কথা মাইয়া মানষের মুখে ভালো শুনায় না।
স্ত্রী : আপনে আর কথা কইয়েন না। ভেতর ঘর থিকা ভাইয়ার জৈন্য একটা চেয়ার আইন্না দেন। বসেনতো আপা।
স্বামী : এহ। আমি হইলাম অসুস্থ মানুষ, নিজের শরীল নিয়াই চলতে পারি না। আবার চেয়ার…
স্ত্রী: কন, কী জানতে চান আমার কাছে ?
(স্ত্রী উঠোনে বসে ডাটা কালেকটর দুজনকে চেয়ার আর মোড়ায় বসতে দেয়। তাদের কথোপকথন শুরু হয়। কোন শব্দ শোনা যায় না, মুকাভিনয়ের মাধ্যমে স্ত্রী তাদের প্রশ্নের জবাব দেয় ও ওজন উচ্চতা নির্ণয়ে সহায়তা করে। স্বামী কঁকাতে কঁকাতে বারান্দায় গিয়ে বিছানায় শোয়ার ভঙ্গী করে:)
স্বামী : শরীরটা আর সোজা রাখন যাইতাছে না। একটু রেস্ট লই।
(শুয়ে সে স্বপ্ন দেখতে থাকে- স্বপ্নে গাজর পেপে মিষ্টি কুমড়া কচুশাক একে একে নাচের ভঙ্গী করে এসে সামনে দাঁড়ায়। তারপর তাকে প্রশ্ন করে। সব্জির সাথে স্বামীর কথোপকথনের শেষদিকে ডাটা কালেকটর দুজন স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায়।)
সব্জি: তোমার কী হইছে ?
স্বামী : অসুখ। শরীরটা ভালো লাগতাছে না। বল পাই কম ।
সব্জি: (সকলে) ও হইলো তোমার মনের অসুখ।
টমেটো: দেখতে তো সুস্থই মনে হইতাছে।
স্বামী : তোমরাও হনুফার দলে ? আমার কথাডা গুরুত্বপূর্ণ দিতাছো না ? এই দেখো আমি চোখ বন্ধ করলে কিছুই দেখি না। শরীলটা মনে হয় ঢেঁকির নিচে ফালাইয়া কেউ পাড় দিছে! উহ্
সব্জি : (সকলে) এই সবের পিছনে দায়ী তোমার পুষ্টিহীনতা।
স্বামী : এই যে কইলা অসুখ নাই ?
কচুশাক : আরে শরীরে পুষ্টি কম থাকলে নানান রোগব্যাধি বাসা বানাইতে সুযোগ পায়।
কুমড়ো: তোমার হইলো এই সমস্যা।
স্বামী : এই সমস্যার কোনো বাঁচন নাই ? হায় হায় আমার কী হইলো…
সব্জি : (সকলে) আছে। আছে। আছে।
স্বামী : কী। কী। কী ?
সব্জি: (সকলে) আমাদের খাও। আমাদের খাও। আমাদের খাও।
স্বামী : তোমরা কারা, পরিচয় কী তোমাদের ?
কচুশাক : আমি হইলাম কচুশাক, চোক্ষের জ্যোতি রাখি ঠিকঠাক।
পেপে : আমি পেপে, আমারে না খাইলে জীবাণুরা ক্ষ্যাপে!
গাজর : মাই নেম ইজ গাজর, শয়তান জীবাণুর ভাঙি পাঁজর!
কুমড়ো : আমি কুমড়ো : দেখতে হলুদ আর স্বাদে মিষ্টি; রোগ প্রতিরোধে আমি দেই দৃষ্টি।
টমেটো : আমি লাল টমেটো- চেহারাটা হ্যান্ডসাম; মানুষের দেহে পুষ্টি সাপ্লাই আমার প্রধান কাম।
লঙ্কা : দিস ইজ কাঁচামরিচ, ঝাল অতি ! মানুষের করি উপকার আর জীবাণুর করি ক্ষতি!
স্বামী : (স্বগত) উরিব্বাপরে বাপ! এইটা কী শোনলাম ? এই তরিতরকারীর এতো ক্ষ্যামতা ? এরা তো সব এক একজন এমবিবিএস ডাক্তারের চাইতেও বেশি মনে হইতাছে! …এই, তোমরা যা কইলা এতক্ষণ, সব হাচা ?
সব্জি : (সকলে) হাচা, হাচা, হাচা !
স্বামী : আমার তাইলে কি করা লাগবো ?
সব্জি : (সকলে) বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাইতে হইবো।
স্বামী : খাইলে কি হইবো ?
গাজর: তুমি ভালো হইয়া যাইবা।
স্বামী : অষুধপত্র ?
মরিচ: আরে রাহো তোমার অষুধ। শরীরে পুষ্টি নাই, তাই পুষ্টিকর খাবার খাইতে হইবো, ব্যাস
স্বামী : তোমরা কি ডাক্তার ?
পেপে: না, আমরা ডাক্তার না।
টমেটো: কিন্তু ডাক্তাররা আমাগোরে চেনে।
কচুশাক: বিভিন্ন রোগ ব্যাধিরাও আমাগো চেনে।
কুমড়ো: আমরা যেইখানে থাকি, সেইখানে তারা একটু কম যায়।
স্বামী : সইত্য নাকি ?
সব্জি: হ। হ। হ।
মরিচ: গন্ডায় গন্ডায় অষুধ না খাইয়া আমাগো যতো বেশি খাওন যায়, ততোই ভালো।
গাজর: আর একটা কথা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে সাধারণ অসুখ বিসুখ দাঁত বসাইতে পারে না।
স্বামী : উহ, এই সাধারণ অডিনারী জিনিসটা এতোদিন জানি নাই। বস্তা বস্তা অষুধ না খাইয়া যদি ঠিকমতো তোমাগো খাইতাম তাইলে আজ আর এই অবস্থা হইতো না।
সব্জি: (সকলে) হইতো না। হইতো না। হইতো না।
স্বামী : তাইলে আসো, তোমাগোরে খাই। (বলে স্বামী হাত বাড়িয়ে সব্জিদের ধরে খেতে গিয়েই বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। সে চিৎকার দিয়ে উঠলে স্ত্রী দৌড়ে আসে) ওরে বাপরে, গেছিরে গেছিরে গেছি….
স্ত্রী : কী হইলো আপনের, অমন চিৎকার পারতাছেন কেন ?
স্বামী : আমি গাজর খাবো।
স্ত্রী : কী ?
স্বামী : আমি পেপে খাবো।
স্ত্রী : কী ?
স্বামী : আমি মিষ্টি কুমড়া খাবো।
স্ত্রী : কী কইলেন ?
স্বামী : আমি কচুশাক, টমেটো, কাচামরিচ সব খাবো।
স্ত্রী : (হেসে ) ক্যান। এইগুলি নাকি গরীব মিশকিনগো খাবার। আপনে তো ওইসব খান না।
স্বামী : না, না, না ভুল করছি এতোদিন। এহন থেইক্যা আর ট্যাবলেট না। ভিটামিনে ভরপুর খাবারই খাবো। খ্যাতা পুরি হরলিক্সের….