কবিতা

লগফ্রেম

উদ্বিড়াল দম্পতি পৃথিবী থেকে
বিদায় নিয়েছে এই জেনে, যে
মানুষ এক অমায়িক খচ্চর!

রেডবুক দীর্ঘ হলে
ওদের কিছু আসে যায়না। আসে যায়না 
মোবাইলের টাওয়ারের কারণে
কচি নারকোল ঝরে গেলে...

এতোসব কিছুই লাগতো না আমাদের।
এই ইন্টারনেট, এ্যারোপ্লেন, হর্টিকালচার...
সব আমরা কৌতুহলে তৈরি করেছি।
তুষারঝড়ের গড় বিচ্যুতি পরিমাপের
কোন প্রয়োজনই হতো না যদি
পাহাড়কে আমরা না ঘাঁটাতাম।

আমাদের লগফ্রেম, বারচার্ট,
ডোনার রিপোর্ট আর রাশিরাশি
রিসার্চ পেপার কাকাতুয়ার
নিরাপত্তার জন্যও জরুরী নয়

মানুষ

মানুষ হলো জানোয়ারের জাত।

পালে পালে জন্মায়
তারপর একটা একটা করে মরে!
এরা মরার জন্যই জন্মায়, অথচ
মরা আর বাঁচার মাঝখানের কালটা
রাজ্যের শয়তানি আর ভালোমানুষীতে
পার করে দেয়।

এই মানুষের জন্যই মানুষ বেঁচে থাকে,
আবার মানুষকে মারতে
কতো ফন্দিফিকির!
আমরা যদি একটু মানুষ হতাম-
তাহলে মানুষকে আর অমানুষের মতো
না খেয়ে মরতে হতোনা, শালা!

কালপুরুষ

বলপ্রিন্ট পরিহিতা মাছরাঙা-রোদ
এসে বলে গেল- বসন্ত সমাগত!
তা'বলে ভেবোনা এই শীতের উত্তাপ
তোমার পাঁজর থেকে খরিদ করেছি।

আকাশে যে কালপুরুষ
কটিবন্ধে তরবারি নিয়ে বিপুল উদ্যমে-
আমি তাকেও জানিয়ে রাখি
শীতরাত্রির সহজ সংকেত!

কেননা মানুষ মাত্রেই গতিশীল।
মানুষ মাত্রেই কিছুটা সন্দেহ!

জোড়া

জোড়া দেয়া দুটো          তারের মাথায়                জ্বলছে আলো।
তুমি কি রেবতী             বেসেছিলে বলো            বেসেছ ভালো?
জোড়া দেয়া দুটো          মানুষ তো নয়,               অন্ধ জ্যোতি
এক পা পেছলে,            এক পা এগুলে              কী আর ক্ষতি!

জোড়া দেয়া দুটো          হৃদয় ভীষণ                   একাঙ্কীকা
রেবতী তোমার              চোখেই জ্বলুক               প্রদীপশিখা
জোড়া দেয়া পথ            পৃথক এখন                   বিবিধ স্বরে
রেবতী তোমায়              কতো নামে ডাকি,         মনে কি পড়ে?

ফিলাডেলফিয়া

রেবতীকে আমি ডাকতাম ফিলাডেলফিয়া। মনে হতো
ফুলের নামে ডাকছি!
সে আর একজনের বাগদত্তা ছিলো। রেবতীকে
তারপরও আমার ভালো লেগেছিলো,
রেবতীর আমাকে। আমরা কতো কতো শহর ঘুরেছি,
আবার কতো যায়গায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমাদের!
  
যেমন ইজিপ্ট! স্ফিংসের সামনে পামপাতার হ্যাট পড়ে
পোজ দেয়া রেবতীর কোন ছবি
পোস্ট করা হয়নি আমার। তার মুখের কারুকাজ
আর মমিমাখা চিবুকের অলীক ইশারা, রাত হলে,
কতো কতো রাত আমি রহস্যে দেখেছি!
রেবতী এখনো কারো বাগদত্তা! এখনো মাঝে মাঝে
তাকে ফিলাডেলফিয়া ডাকি!
  
এখন ডাকলে মনে হয় রেবতী এক ব্যস্ত শহর! 

শীতার্ত সব দিন

এইখানে এক ঝর্ণা ছিলো আগে।
কে বলেছে ঝর্ণা ছিলো আগে?
বরফ গলে ঝর্ণা হতে 
অনেক সময় লাগে! ওসব মনের ভুল
পাহাড়চূঁড়োয় খেলতে গিয়ে বরফে মশগুল
পথগুলো সব খাড়াই, বাঁকা - গোলকধাঁধায়
মস্ত আঁধারকর
আমার সাথে পথ হারালো একটা শালিখবর।

হুহু বাতাস শিষ দিয়ে যায়, ডাকে-
আমি, নাকি শালিখপাখি, কে পৌঁছালো আগে?
শীতার্ত সব দিন
পথগুলো সব গোলকধাঁধা
পাথুরে মসৃণ!

ঝর্ণা জমে বরফ হতে অনেক সময় লাগে।

২৩ মে ২০২১, সেন্ট্রাল রোড, ঢাকা।

 

ভনলতা বেওয়া

আজার বচ্ছর হামি আস্তা মাপিতেছু বাহে দুনিয়ার আস্তায়,

আলাংফালাং মুই কম না করিচ্চি চ্যাংড়াকালে!
চিরিরবন্দর ছাড়ি দাগনভুইয়া গেলু কোচখালী বেলকুচি রোড-
ভন্লতা নামে এক বিটিচ্ছাওয়া পুছ্ করে

ট্যাঁকে মোর কতো আছে নোট?

… চুল তার ম্যালাদিন তেলসাবান না দেখিচ্চে,

মুখে নাই ছুনো-
পক্খীর বাসার মতো নয়ন মেলিয়া কয়

ফ্লেক্সি দ্যান দশটেয়া, চান যদি মন ও…!!!

গোলাপগ্রাম

আমি জানি গোলাপগ্রামের কেউ

গোলাপের প্রেমে উন্মত্ত নয়!

রাশি রাশি নোট কেটে গোলাপের পাপড়ির স্বেদ

আর সতেজ পাতারা পরিপাটি।

 

যে প্রৌঢ়া বয়সিনী প্রতিদিন চারাদের

পরিচর্যা করে মাটি সার দেয়-

তুলে আনে উটকো আগাছা

তার চোখে প্রেম নেই -ভবিতব্য তাকে এই কাজে

ইশারা দিয়েছে- চকচকে কয়েনের চাষ!

কর্পোরেট পরিবেশে গোলাপেরও অর্থনীতি ভালো।

 

 

১৩/১১/২০২০, সেন্ট্রাল রোড।

ক্রাশল্যান্ডিং

এইতো

        এসেছি

                 নেমে-

     নিচে রানওয়ে।

রক্তরসে তুড়ি মেরে

এতক্ষণ উড়ছিলাম

তুলোভর্তি ফাঁপানো আকাশে।

 

ছ্যাঁৎ করে ঘষা খেলো পীচরাস্তা-

বাষ্পীভূত ছাই! আকস্মিক বায়ুভারে

এইতো এলাম নেমে ত্রাহিবেগে

টালমাটাল রানওয়ে, অগভীর ঢালে-

 

দাউদাউ, পাগলাঘন্টি, ভারী বুট,

তীক্ষ্ণ সাইরেন- আঁটসাঁট সিটবেল্টে

ঘাড়ভাঙা পড়ে আছে তৃতীয়ার অর্থহীন চাঁদ!

 

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

হারানো মক্ষিকা

তোমার জন্য,                   ও প্রিয়মেঘ

               হারানো মক্ষিকা-

রবিবাবুর                        বাতাস ছুটুক

                তুফান উঠুক       

                     ঘরে

দৃষ্টি ভীষণ                       ঝাপসা এবং

বৃষ্টিটাও                      খুব নেমেছে ঝেঁপে-

মেঘের প’রে                    মেঘ জমেছে

              খাটপালঙ্ক ব্যেপে

ঝড়ের মধ্যে                    মেঘমন্ত্র

             পড়ালো শিক্ষিকা

             শঙ্খলাগা ঠোঁটে।

 

ও শিক্ষিকা,                     তুমি আমার

            আধিকারিক হবে?

লিখে দেবো                     পূবের বাতাস

              আঁধার অম্বরে

দেখতে পেলাম                 মেঘের মেয়ে-

             হারানো মক্ষিকা-

       

                  তবে

    আমার দেখায় ভুলও হতে পারে!

 

 

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০