অবদমন: একটি অশালীন পর্যালোচনা

ক.
খারাপ হবার চান্স পাইনি বলে ভালো…

ঝিকাতলা থেকে বারিধারা যেতে, যেভাবেই যাই- কমসে কম একঘন্টা লাগবেই। তার ওপরে আজ সোয়া আটটা বেজে গেছে! নটার অফিস ধরার জন্য ব্যাকুল আমি রাস্তায় বেড়িয়েই বুঝতে পারলাম আজ খবর আছে। মোড়ের কাছে যেখানে সিএনজি অটোরিক্সা চালকবৃন্দ নেহাৎ খোশগল্প করার জন্য ওৎ পেতে থাকে- আজ তারা আরও বেপরোয়া। বারিধারা কেউ যাবেনা। কোথায় যে যাবে, তা তাদের জন্মদাতারা জানলে নিশ্চয়ই তাদের জন্ম দেয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও মনে জন্ম দিতো না। আমার আশেপাশে আরও অনেকে বিভিন্ন স্থানে যাবার জন্য প্যাশলামী করছে। কিন্তু চালকেরা আমাদের উপদেষ্টা মণ্ডলীর মতোই নীতিতে অনড়! এর ভেতরেই দেবদূতের মতো একটি সিএনজি চ্যারিয়টের ন্যায় আমার সামনে এসে থামলো। কোঁই জ্জাইবেন বাঁই? গ্রিল করা খাঁচার ভেতর থেকে নেহাৎ অবজ্ঞা ভরে মেগাসিটির টোনে জিজ্ঞেস করলো সে। (আমার ধারণা, এই খাঁচা সৃষ্টির পেছনে প্রধান মোটিভ হলো: ভয়। পাবলিকের ওপর নিতান্ত অন্যায়ভাবে তারা যে বাড়তি ভাড়া আদায় করে কিংবা মিটার ছাড়া ‘কন্টাকে যাইমু’ বলে খামি দেয়; তার থেকে নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে সচ্ছন্দ রাখার জন্য এহেন খাঁচার চেয়ে উপযুক্ত আর কী আছে?) তারপর খুব দয়ালু স্বরে উঠতে ইশারা করে শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয়র মতো লাজুক হেসে বললো দশটা টাকা বাড়াইয়া দেতে অইবে কইলাম। এবার আমি তার দেশের বাড়ি ঠিক পেলাম। বরিশালের বিল অঞ্চল থেকে এসেছে ব্যাটা। আর এসে একদম অমানুষ হয়ে গেছে। লোকটার কপাল খারাপ, তাই বাঁ দিকের দরজাটা খুললো থুথু ফেলবে বলে। কিন্তু ওর আর থুথু ফেলা হয়ে উঠলো না। কেননা ‘দেতে হইবে’ শুনেই আমার রক্ত চড়ে গেছে মাথায়। খপ করে বাঁ হাতে চুলের মুঠি ধরে ডান পা ভাঁজ করে মাসুদ রানার স্টাইলে হাঁটু দিয়ে সজোড়ে মারলাম ওর মুখে। নাকের হাড় যে এতো নরম তা আগে জানা ছিলো না। ঘট করে শব্দ আর গলগল রক্ত একসাথে বেরোলো। মাথাটা ঠুকে গেলো উপরের রডের সাথে। খানকীর পোলা, তোর দশটাকা আইজ বাইর করতাছি শুয়ারের বাচ্চা, বাইরা চোদনা! …কী হইলো, মারলেন কেলেগা? বলে যে হিতাকাঙ্খী বোকাচোদা ব্যাক্তিটি এগিয়ে এলো সিএনজি চালকের সহমমীর্ হয়ে- তাকে আমি মারলাম না। শুধু বললাম, মাঙ্গের পোলা যেইহান দিয়া আইছো, হেইহানে ভইরা দিম্ যা ফোট্! আমার রক্তচক্ষু আর খুনে চেহারা দেখে জটলা তেমন জমলো না। অদুরে কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণের মতো জনৈক ট্রাফিক সার্জেন্ট অলস দৃষ্টিতে ঘটনা প্রত্যক্ষ করছেন। ট্যাক্সিচালক নাক চেপে হতবাক কাঁপছে ভয়ে। আমি চাপা শাসানির স্বরে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম— চালা!! লোকটা টু—শব্দ না করে মিটার এ্যাডজাস্ট করলো আমি উঠে বসার আগেই তারপর ঘরাৎ করে ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো। বেশ খুশি খুশি মনে ক্রোধ প্রশমিত আমি সিগারেট ধরালাম… আপনাদের কী ধারণা, ওপরের ঘটনাটা সত্যি সত্যি ঘটিয়েছি আমি? আরে নাহ্ , ও—তো আমার ভেতরের জিঘাংসা! যা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ক্রমাগত হজম করে যাচ্ছি। আসল কাহিনী হলো দশ বাড়তি মেনে নিয়েই আমি সিএনজিতে উঠে বসেছি। তবু যদি অফিসটা পাই আজ… বোকাচোদার বাটখারা আর কাকে বলে! তদুপরি মদনমোহন তর্কালঙ্কার আমাকে মেনে নিতে হয়েছে ওর মিটার টেম্পারিং আর ভাংতি নাইয়ের নখড়া। ফলাফল একশত টাকা!

দর্শকশ্রোতা , আমার অবদমনের এই উদাহরণ আপনাদের জীবনে সত্যি সত্যি হয়ে বার বার ফিরে ফিরে আসুক এই কামনা নিয়ে শুরু করছি। আশাকরি সবাই খারাপ আছে, অবদমিত আছেন এবং সেই খারাপ থাকাকে যথাসম্ভব দমিত করে ভালো থাকার বেহুদা এ্যাক্টিং করতে করতে রীতিমতো হাত পাকিয়ে ফেলেছেন। সাবাস!

তো আগেভাগেই বলে রাখি: গদ্যে তত্ত্বের তালাশ করেন যারা, তাদের জন্য দুঃখিত, কোন আশার বাণী শোনাতে পারছি না। এবং যারা অবদমন বলতে যৌন—অবদমন শব্দবন্ধের মোড়কে ফ্রয়েড—ফ্রাই খেতে চান তাদেরকেও অন্য রাস্তা দেখতে হবে। বস্তুত, যৌনদণ্ড বা তদ্বিষয়ক কোন চুলচেরা (বালছেড়া) ব্যাখ্যা এখানে বালখিল্য! প্যাট্রিয়ার্কির ইয়ার্কি করতে করতে এমন ন্যারো ফিল্ড অব ভিশন তৈরি হয়ে গেছে আমাদের যে অবদমন শব্দটি তার প্রকৃত আবেদন হারিয়ে বসে আছে। শুনলেই যৌনগন্ধের ভিয়েনের স্বাদ পাওয়া যায় যেন। অথচ বসের ঝাড়ি খেয়ে, চারপাশে কতো কতো সফলতার হাইরাইজ প্রত্যক্ষ করে আর বন্ধু বা কলিগের স্ত্রীর আটসাঁট শরীরের সাথে নিজের প্রাপ্তির ব্যালেন্সসিটে ঘাপলা তৈরি হলে যে সো—কল্ড অনেস্টির মখমলে নিজেকে জড়িয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়ায় আর ‘এই গরীব দেশে জন্ম না নিলে হু হু আমিও দেখিয়ে দিতাম…’ আচরণকে আপনি কী বলবেন, শুধু ব্যর্থতা? নাকি আরও কোন ফ্যাক্টর কাজ করছে এখানে? প্রকৃতপক্ষে, এক অমোঘ অচীন অবধারিত অবদমন আমাদের চলমান জীবনে ক্রমশ বহমান। সে কথায় পরে আসছি। তার আগে শ্রোতা—ভাই—বন্ধু আপনাকে দিয়ে কিছু শর্তসন্ধি সাইন করিয়ে নিতে চাই। তাতে আমাদের দুপক্ষেরই কথা বলতে সুবিধা। কেননা অঙ্ক করতে হলে কিছু সমীকরণতো আপনাকে মানতে হবেই, না কি? তো এক্ষণে আমার প্রধান দুটি অনুসিদ্ধান্ত— যা আমি বোধ করছি— আপনি একমত হবেন:
এক: আমরা একটি বদ্ধ সমাজে বসবাস করছি। এবং
দুই: আমরা একটি সা¤প্রদায়িক বদ্ধ সমাজ—রাষ্ট্রে বাস করছি।

খ.
আগামী শতাব্দীতে বালুচরী শাড়ি
বালিহাঁসের মতোই মাংসাশীদের খপ্পরে পড়বে…

অতিসা¤প্রতিক বিষয়—বিশ্লেষ করার কিছু বিপদ আছে কারণ কাহিনী যেহেতু তখনও চলমান তাই শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলা মুশকিল। যাদুঘর থেকে প্রত্ন—পাচারের বিষয়টি সম্বন্ধে আপনারও নিশ্চয়ই নিজস্ব বীক্ষণ আছে। তথাপি যদি জিজ্ঞেস করা হয় সরকার বা সরকারে বসা লোকগুলো কি শুধুমাত্র তাদের মাথামোটা চিন্তার ফলেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাহলে আপনি তার সাথে যোগ করবেন উদাসীন পথিকের মনের কথা, লোভ, ওভারসীজ টুরের মূলো, ডোনারদের প্রেসার, দেশপ্রেমের অভাব আর কর্তব্যে গাফিলতি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ভাবুনতো, যারা বামিয়ান পর্বতে বুদ্ধের প্রাচীন মূর্তিদুটি গোলার আঘাতে উড়িয়ে দিয়েছিল, সেখানেতো আন্তর্জাতিক চাপ ছিল, নিন্দা উঠেছিল। তবুও রক্ষা পায়নি শেষ পর্যন্ত। আমরা তো তবু প্রতিবাদ করেছি (ভাবতে শান্তি পাই! আসলে কি প্রতিবাদ হয়েছিল, তেমন করে?)। আর এসবের পেছনে আমাদের প্রত্যেকের অবদান সমপরিমাণ। শৈশব থেকে অবদমনের চুড়োয় আরোহন করে বসে আছি আমরা। এবং একথা আশ্চর্যরকম সত্যি যে, যতো ধরনের দমননীতি রয়েছে তার মধ্যে সাংস্কৃতিক অবদমন শিরচুড়ামনি! রাষ্ট্র তাতে মদদ দেয়। বলে: দেশে ভয়ানক সৌভাত্তৃত্তো বিরাজ করিতেছে। ওদিকে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব—গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে নানাপ্রকার অনুষ্ঠানাদি পালিত হয়। রাস্টোপতি ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেত্রীবর্গ তাতে বাঁণী দেন। বলেন, আমাদের হাজার বছরের সাফল্যমণ্ডিত ইতিহাস রয়েছে। দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আমরা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অবস্থান করতে যাচ্ছি বলে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কচুশাকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় দুই টাকা কমে এখন মাত্র বিয়াল্লিশ টাকায় বিকোচ্ছে। অদিকে ঘোষিত পুরাকীর্তির নিদর্শন—মন্দিরগুলোর খোয়া যাওয়া মূর্তির বেদিতে ছাগলের লাদি আর সদ্য চূণকাম করা শ্যাতলা পড়া মোটা দেয়ালে অনভ্যস্ত বাংলালিপিতে খোদিত: তোরে চু—! শ্রোতাবন্ধু আপনি যদি বিষয়গুলিকে কো—র্রিলেট করতে পারেন তাহলে ল্যাঠা চুকে গেলো। আর তা না হলে আমাকে সেই শুরু থেকে শুরু করতে হবে, যখন আমাদের শেখানো হয় জল নয় পানি, মাংস নয় গোশ্, খোদা হাফেজ নয় আল্লাহ হাফেজ। তো আমাদের সাংস্কৃতিক অফিসাররা যদি বজ্রসত্ত্ব বা বিষ্ণুমুর্তির মাজেজা না বুঝে থাকেন তবে তা তো তুশ্চু। অবদমনের বাই প্রডাক্ট হয়ে আমরা দিকে দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছি আর ছড়িয়ে দিচ্ছি আহা রাশি রাশি অন্ধকার। কে আমাদের ভরসা দেবে কে দেখাবে আশার বাউন্ডারিÑ তাতে কোন্ চঁ্য্য্য্য্য্য্য্যাট এলোগেলো? আর আমার বিদেশিনী কলিগ কিছুতেই বুঝে পায়না, ফ্রান্সের মতো একটি কালচাড়ালি ডেব্লাপ কান্ট্রিতে আমাদের আর্টিফ্যাক্টসগুলি পাঠানোতে আমার আপত্তি কেনো, যেখানে আমার সরকারই সাইন কোরেছে। তার মতে এ—ও একধরনের কালচারাল রিপ্রেশন। এবং ফ্রয়েড সাহেব যথার্থই বলেছেন (?), অবদমনের ফল হয় মারাত্বকÑ সুদুরপ্রসারী এবং বহুদিগবিস্তৃত! জেনে রাখুন, নিজের বৌকে নাভির ওপর শাড়ি পড়তে বলে অন্য মেয়ের নাভির দিকে তাকাবেন না।

গ.
হালায় আইজকা নেশা করছি বহুত…

ঢাকা শহরের যতোগুলো ঘোষিত ও অঘোষিত বার বা মদবিপণনকেন্দ্র রয়েছে তারা সকলেই শুক্রবার বন্ধ থাকে। একমাত্র বোকাচোদা কান্ট্রিতেই এহেন ফাজলামি চলতে পারে। এর মানে হচ্ছে আপনি ইচ্ছে হোক বা অনিচ্ছায় সাপ্তাহিক ঐ ছুটির দিনটিতে অন্তত সাত্ত্বিক থেকে নিরীহ সাদাসিদা সহি জীবন যাপন করতে বাধ্য হবেন। বাকি ছয়দিন ধর্ষণ ও অপরাপর অন্যায় আচরণ করলেও আপনার নাম সিলেবাসে নেই। আমাদের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী সম্ভবত এ কারণেই বাড়িতে মদ রাখতেন। আর কেউ সম্ভবত রাখে—টাখে না। আহা বেচারা।

ঘ.
ডেকো—হেক্টা—কিল—মারিয়া—দেশি—সেন্টি—মিলি!

যৌন—অবদমন ওয়াইডলি ে¯প্রড হবার পেছনে বড় কারণ পাশ্চাত্যের প্রপাগান্ডা বলে আমি মনে করি যদিও তাবৎ রিপ্রেসনের ভেতরে উহা অতি সামান্য অংশ। বলতে গেলে হিমশৈলচূড়া। কোথায় নেই তার অস্তিত্ব বলতে পারেন? ভালো মানুষের সংজ্ঞার খোলসে আর খারাপ মানুষের তকমার কাঠামোয় বারুদের মতো ঠাসা আছে বিস্ফোরণোম্মুখ অবদমনের এমুনিশন। তবে আপাত—দৃশ্যমান অংশ বলেই হয়তো যৌন—অবদমনভিত্তিক কালচার আর কূটকচালি অন্যান্যগুলির চেয়ে বেশি। একে ফিগার—আউট করা অপেক্ষাকৃত সহজ সেই অর্থে। নিষিদ্ধ ভোগ চরিতার্থ না করতে পারার রিরংসা পরিমাপণের মাধ্যমে অনায়াসে তাকে লেবেল মারা সম্ভব। এবং তার পরিত্রাণে পাশ্চাত্যের প্রেসক্রিপশ পাওয়াও তেমন কঠিন নয়। অথচ প্রাচীন—প্রাচ্য কখনোই যৌন—অবদমনের পীড়ন অনুভব করেনি। তার নিজস্ব একটি স্যাক্সুয়াল—ফিলসফি ছিল, আছে। কিন্তু পাশ্চাত্যের তাতে মন ভরে না। তারা বরাবরের মতো তাদের আগ্রাসী বোধ থেকে আমাদেরকে জ্ঞান দেয়। আমরা যেন তা গ্রহণ করি। তারা বলে, তোমরা এখনও সোসাল—এনিমেল হয়ে উঠতে পারোনি। দেখো আমরা এভাবে এভাবে সেক্স করি, একে বলে উদ্দামতা, একে বলে অর্গাজম আর এইভাবে নারী শরীরকে ছুঁলে তাতে সম—অধিকার বিঘ্নিত হয় না। এর ফলাফল ধরে উঠে আসে আর এক ডব্লিউ ডব্লিউ এফ চ্যাম্পিয়ন— জেন্ডার ইস্যু। কিন্তু তাদের বেধে দেয়া বেঞ্চমার্কে আমাদেরকে উৎরাতে হবে কেনো? আর এইসব, সকল বঞ্চনার পেছনে যে অর্থনৈতিক অসাযুজ্য; তার কথা তুললেই ওরা তখন একারবে বলতে থাকেন রাজনৈতিক অব্যবস্থা ও অদূরদর্শীতার কথা। ফলত গুড গভর্নেন্স আমাদের পথ দেখাবে এই মনে করে কতো কতো বাকোয়াজের পাখোয়াজইনা আমাদের কানের কাছে বাজানো হচ্ছে।

কেমন করে এমন একটি ভিশাস—সার্কেলে যুক্ত হলাম আমরা তা খুঁজতে গেলে দেখা যাবে সমাজের স্তরে স্তরে সুপার শপের মতো সাজিয়ে রাখা আছে দমন—অবদমন আর ভোগের নামে আসক্তির যাবতীয় অনুপান যা একটি বৈষম্যময় বিজাতীয় সমাজসূচনার জন্য কেবল উপযুক্তই নয় অনিবার্য উপকরণও বটে। এবং চোখ থাকলে দেখা যাবে চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতো যতোগুলি রাষ্ট্রীয় সংস্থা ক্রিয়াশীল তারা ঐ চরকায় রীতিমতো তেল দিয়ে যাচ্ছেন এবং নিয়মমাফিক দেখভাল করছেন যাতে তা ক্রমাগত আরও শক্তিসঞ্চয় করে গর্দানে—গতরে দেখনসই হতে পারে। এবং এভাবেই ভোগ—বঞ্চনার বিপরীতমূখী দুই স্রোতে আমাদের নিজস্বতা ভেসে যাচ্ছে আর ভিজুয়ান একুইটির ভেতরে কাঠের পুতুলের মতো খাড়া করা হচ্ছে কিছু চিহ্নিত শক্রমণ্ডলী। যারা প্রতিরোধ পেলে ছায়াবাজির মতোই মিলিয়ে যেতে সক্ষম। কিন্তু আসল গডফাদার ধরাছেঁায়ার বাইরেই থেকে যায়। এভাবে ধাঁধায় ফেলে দেয়া বহু প্রাচীন একটি স্ট্যান্ট, যা বর্তমানে আমাদের নিজেদেরকেই হাত পা বেঁধে কুয়োয় ফেলে দেবার অবস্থা করেছে। আর আমরা তলিয়ে যাচ্ছি নিচে আর যেতে যেতে ভাবছি আমার সমাজে আমার কালচারের এই এই দিকগুলি সেকেলে হলেও তা আমার মেনে চলা উচিত কেননা তা এইভাবে নিজস্ব কৃষ্টি ধরে রাখতে সহায়তা দেবে। এবং পাশ্চাত্যের এই এই ভালো ভালো বিষয়গুলি আমার সংস্কৃতিতে অবশ্যই অবশ্যই আনতে হবে কেননা তা রপ্ত করতে পারলে সবাই আমাদের আধুনিক জাতি হিসেবে মেনে নেবে…

আমার কিছু দার্শনিক—কাম—বন্ধু রয়েছে যাদের কাছে মাঝে মাঝে তত্ত্বে টান পড়লে আমি তালাশ করি। তাঁদের মতেÑ
— অবদমন এক প্রকার ক্ষুধা, যার চরম প্রশমন অবাস্তব বলে সতত চলমান। এই তৃতীয়বিশ্বের দেশে বসে অবদমনের অবদান নিয়ে বাক্যব্যায় করাটাই এক সেন্সে লোকসান। কারণ ঢাকায় বসে পাত্তায়া বা বালির বীচের বিকিনির আস্ফালন নির্ঘাৎ ব্যাকফায়ার ঘটাবে চলমান জীবনে। মন আর মাথার কৈবল্য (বৈকল্য?) ঘটে যাবে। তবে এ কথাও ঠিক যে হিউম্যান ব্রেইন এমনভাবে প্রোগ্রামড্, যার কারণে চরম অপ্রাপ্তিকেও সে কোন না কোনভাবে ম্যানেজ করে নেয়। আর করে নেয় বলেই আমরা ক্রমাগত সংখ্যাটা বাড়িয়ে চলেছি: এই সেদিন শুনছিলাম বারো কোটি; তারপর সাড়ে তের কোটি, চৌদ্দ কোটি, এখন শুনছি পনের কোটির কিছু বেশি, সঠিক সংখ্যাটা চালের দামের মতো ব্যস্তানুপাতিক নয়তো!

ঙ.
এ্যায়সি আসানি নেহী হ্যায়রে মাগী…

আমার কৌতুহল ছিল একালের নিউ জেনারেশন অবদমনকে কিভাবে দেখে, কী ভাবে অবদমন বিষয়েÑ তারা তো নেটিজেন। প্রত্যেকেরই হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইস আর ফেসবুক আছে। বেলবটমের সহোদর কাটিংয়ের রাস্তা—ঝাড়–—দেয়া জিন্স আর যেনতেনপ্রকারেণ শট—ঢোলা টি—শার্ট চড়ানো মায়াময় দুটো চোখ আর চিবুকের কাছে এক চিলতে দাড়ির বাহানায় তাদেরকে নগর বাউল বলেই মনে হয়। গোড়ালি ছুঁই ছঁু্ই যে ল্যাগব্যাগ আনইম্প্রেসিভ ঝোলাটা সবসময় ওদের কাঁধে ঝুলে থাকে আমার রহস্য লাগে দেখতে ওর ভেতরে কী রাখে ওরা, কোন স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ায় নিয়ত! তো এদের কিছু স্যাম্পলের সাথে বাতচিত করে বোঝা গেলো, মুক্তিযুদ্ধকে তারা ৯০ এর পর থেকে বিবেচনা করতে চায়। তাদের কাছে একটি স্বাধীন দেশ পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা ঘৃণিত কিন্তু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের বিচার তেমন প্রাসঙ্গিক নয়। এ এক উদ্ভট উটপাখী জেনারেশন। যাদের নিয়ে আমি না আশাহত না উচ্চাশী হতে পারি। অন্যদের নকল করে তার কাতারে পেঁৗছাতে উৎরাতে তারা নিয়তই ব্যস্ত। এবং কী ভীষণ পরিমাণে তারা ব্যস্ত সবকিছু ডাউনলোড করতে! ব্যতিক্রম হয়তো আছে। তবে তা সংখ্যায় সামান্য। অথচ কী বিপুল প্রাণশক্তি, তাকে যদি আত্মঅন্বেষণের দিকে প্রবাহিত করা যেতো…

চ.
শটগান দিয়ে তুমি চাঁদ পেড়ে ফেলো নার্সিসাস…

মাঝে মাঝে আমি ওভারব্রিজের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ দেখি। মানুষের চরম অসহযোগের ভেতর যুক্ত হবার প্রচেষ্টা দেখি। এবং দেখি ম্যানিকিন মেয়েরা সাজুগুজু করে গুটি গুটি পায়ে ভীষণ অর্থবহ ইশারায় নিষ্পাপ—সরলতার পরাকাষ্ঠা হয়ে ত্রস্ত হেঁটে যায়। যেন আতঙ্কিত; না জানি কার ভয়ে ক্রমাগত তারা কেবল পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ছুটে যাচ্ছে জীবনে যা ঘটে চলেছে তার থেকে মুখ সরিয়ে হয়তো বাস্তবকে অস্বীকার করে অবাস্তব পিওরিটির দিকে। মনে হয় কে যেনো তাদের কাছে মন্ত্রণা দিয়েছেÑ তুমি ভেবো না, তুমি দেখো না, তুমি জেনো না যে, তুমি আরও বেশি কিছু জানতে দেখতে ভাবতে পারতে। বরং এই ভণ্ড নিষ্পাপের, সৌন্দর্যের শিরোপা তোমায় দিলাম। তুমি তাতে আপাদমস্তক ঢেকে চলো ভালো মেয়ে! সবকিছু এমন করে ঢাকো যেন বোঝা না যায় তোমার ভেতরে নারীত্ব উঠেছে।
— আসলে কাকে বলে ভালো মেয়ে?

শেষ সংকেত
যা লেখা প্রয়োজন ছিলো অথচ লেখার পরে নিজেই ভেতর থেকে বেছে বেছে শব্দগুলো পাল্টে দিলাম, পুরো লাইন প্যারা অব্দি ডিলিট করে দিলাম যেটুকু পড়তে বা পড়াতে সাহসে কুলোবে না ভেবে, আসলে হয়তো তাই—ই অবদমন।

========

টীকা:

  1. এই লেখাটি মক্সো করি গত ডিসেম্বরে, সেই সময়কার কতিপয় এডভাইজর ছারদের কথা কল্পনায় রেখেই!
  2. দর্শকশ্রোতা, আমি দশ বলছি, সংখ্যাটা বিশ, ত্রিশ যা খুশি আপনি বসিয়ে নিতে পারেন, সময় বিশেষে
  3. এই স্যাট্—টেক্—সাইবার—ইনফোর ভিজুয়াল দুনিয়ায় সঙ্গীতও যেহেতু দর্শিত হয় এবং ভিজিবিলিটিই একমাত্র মোক্ষ বলে ধরেই নিচ্ছি আপনি পাঠ করছেন না- দেখছেন!
  4. এখানে এসেই আপনার চোখ আড়চোখে এই প্রবন্ধ রচয়িতার নামের উপর চলে গেলো। যাবেই। আর আপনি যা গেস করেছেন ঠিক তাই: লেখক মনেহয় অযথা খুঁচিয়ে দেশে বিরাজমান স¤প্রতিতে চিড় ধরাচ্ছে। শালা মালু! …বস্তুত এই শব্দটি জ্ঞান হবার পর কিংবা তার আগে থেকেই এতো শুনেছি এবং এতোভাবে কু—ব্যবহৃত (এ্যাবিউজড?) হয়েছি এই শব্দটির পীড়নে যে মা ডাকের চেয়েও বড় আপন মনে হয় মাঝেমাঝে। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করুন একাত্তরে সর্বস্ব লুট হয়ে যাবার পর এগারো দিন পায়ে হেঁটে শরণার্থী শিবিরে নয়মাস কাটিয়ে কিসের আহ্বানে আমার পিতামাতাকূল নতুন একটি ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে ফিরে এলো? আর কিসের কারণে আমিইবা গভীর রাতে ভলভো বাসের শেষ যাত্রীর মতো সংখ্যালঘু হয়ে এখনো সিট কামড়ে পড়ে আছি? …খেয়াল করেছেন, ‘লঘু’ অক্ষরগুলি পুরো ইস্যুটাকেই কেমন লঘু করে রেখেছে?
  5. চালের দাম হয়তো আরো বাড়বে ভবিষ্যতে। সেই সময়ে এই লেখাটি পড়তে বসে আমাকে আবার ‘সেকেলে’ বলে গালি দেবেন না যেন!
  6. বলেন তো, শূণ্যস্থানে কোন্ অক্ষরটি মোক্ষম?
  7. শব্দটিকে সাম্প্রতিক অনুষঙ্গের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না প্লিজ!
  8. দেখেছেন, পকেটে পাত্তির জোরে ওরা কেমন পৃথিবীটাকেই গ্রেড করে পৃথক করে ভিন্নভাবে আলাদা করে ফেলেছে?
  9. মাঝ বরাবর চাড় দিয়ে শব্দটি দুই খণ্ড করে ফেললে দেখবেন কি কুৎসিত নঞার্থক শব্দধাতু রয়েছে ভেতরে।
অন্যদের জানিয়ে দিন