লেখার টেবিল

নতুন লেখা

ফ্লাইং সসারটা নামার আর জায়গা পেলো না? নামবি তো নাম একদম বাহিরউদ্দিনের বেগুনক্ষেতে! ফাজিল একটা! আগামি হপ্তায় কুঁকড়ির হাটে বেগুন বেচার কথা। ফড়িয়ারা আগাম কিছু টাকাও দিয়ে গেছে। বেগুন এবার বাম্পার ফলেছে। বেগুন বেচে একটা নয়া ‘সমার্ট’ ফোন কেনার ইচ্ছা ছিলো, তা বোধহয় আর হলো না। গরু তাড়ানোর পাঁচৈনটা বাগিয়ে বাহিরউদ্দিন সসারটার দিকে তেড়ে গেলো।

– এই, এই হারামজাদারা, তোদের আক্কেলজ্ঞান নাই? আমার জমিতে নামলি কেন্? এটা কি তোদের বাপদাদার সম্পত্তি মনে করছিস?

ডুরালুমিনে তৈরি হালকা নভোযানটার গায়ে রাগের চোটে পাঁচৈনের এক বারি বসিয়ে দিলো বাহিরউদ্দিন। ব্যঙঙঙ করে শব্দ হলো। সসারের সাইডে ছোট গোলাকার জানালার মতো কাঁচঘেরা একটা হ্যাচ। সেটা খুলে বাটকু মানুষের মতো দুজন এলিয়েন হামাগুড়ি দিয়ে হাঁচড়ে পাঁচড়ে লাফিয়ে নামলো। 

– সরি সরি সরি, বাহিরভাই। আন্তরিক দুঃখিত! আমরা এখানে নামতে চাইনি। সসার ক্রাশ করেছে। প্লিজ আমাদের ভুল বুঝবেন না!

– ভুল! আমার বিশ হাজার টাকার ফসল তোদের ফাজলামির কারণে বরবাদ হলো, আবার বলছিস ভুল? বলে ওদের পাশেই সসারের ডানার ওপর পাঁচৈনের আর একটা ঘা বসিয়ে দিলো! ক্ষতিপূরণ দে, অক্ষণ দিবি…

– দিচ্ছি দিচ্ছি উত্তেজিত হবেন না।… আর দয়া করে আমাদের এতো মূল্যবান সসারটার এগারোটা বাজাবেন না। (তাদের ঘড়িতে ১২টা নেই, তাই সেটা বাজে না)

বাহিরউদ্দিনের তখন খেয়াল হলো। পাঁচৈনের বারি লেগে সসারের গায়ে লম্বা দাগ পড়ে গেছে! এমনিতে দেখতে আহামরি কিছু না। মনে হয় জিঞ্জিরার বাতিল জিনিস। পুরো বডি জং ধরে চলটা উঠে গেছে। অনেক আঁকিবুকিতে পুরোনো রংটাও বোঝা যাচ্ছে না। চাকু দিয়ে কারা যেনো নিজের নাম লেখার চেষ্টা করেছে সসারের গায়ে। একজায়গায় লেখা কমি+গন্। এরা কারা? প্রেমিক প্রেমিকা মনে হয়। নামদুটোর ওপরে হার্টের সিম্বল! তাহলে এলিয়েনরাও প্রেম করে! 

কিন্তু বাহিরউদ্দিনের এখন প্রেমপিরিতি নিয়ে ভাবার সময় নেই। সে তাচ্ছিল্য নিয়ে বাটকু মানুষদুটোর দিকে তাকালো। খুবই করুণ বেশভূশা ওদের। না আছে স্পেসস্যুট, না অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস। মানুষের সাথে একটাই শুধু পার্থক্য, লোকদুটো লম্বায় মাত্র চারফিট। এমন কেনো? বাহিরউদ্দিনের ঢ্যাঙা শরীরের পাশে ওদেরকে খুবই বেমানান লাগছে। সে একটু দয়া বোধ করলো, পাঁচৈনের বারি মারা উচিত হয়নি। বেচারা এলিয়েন হলেও মানুষ তো! আরি, ওরা কি মানুষ আসলে, না অন্যকিছু?

– এই তোমরা কি মানুষ? তুই থেকে তুমিতে উঠলো বাহিরউদ্দিন। বাটকুদুটো হাসলো। খ্যানখ্যান করে। 

– ইয়েস, উই আর মানুশ, বাট নট হিউম্যান বিয়িং। উই আর এলিয়েনবিয়িং। আর আমরা মানুশ লিখি তালব্য শ দিয়ে। রেস্ট অব অল, সেইম টু সেইম! আমাদেরও গেস্টিক হয়, আমরাও সিডএ্যান্টা খাই…

শুনে বাহিরউদ্দিনের মেজাজ কিছুটা ঢিলা হলো। সসারটার সামনের দিকে আঁকাবাঁকা করে বাজে হাতের লেখায় সস্তা রং দিয়ে লেখা- ‘এলিয়েন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস, পুরারাম টু ঘাটসদর, ভায়া বাগশাহ’। নিচে ছোট করে লেখা- ‘ব্যবহারে ধংশের পরিচয়’! এদের বানান ভুলটা আর শোধরালো না। 

– কী আশ্চর্য! তোমাদের গ্রহেও রামপুরা সদরঘাট, এসব আছে?

– থাকবে না কেনো? আপনাদের যাযা আছে, আমাদেরও তাই তাই আছে! বলে ক্রেডিট নেয়ার ভঙ্গী করলো এলিয়েনদুটো। তারপর বললো, 

– আমাদের গ্রহ ঠিক আপনাদের মতোই। তবে উল্টা এবং কম কম। বেঁচে থাকতে আমাদের বেশি কিছু লাগেনা। এই যেমন ধরেন আমাদের গ্রহে ঠিক আপনার মতো একজন মানুশ আছে, তার নাম ভেতরউদ্দিন। তিনি নগুবে চাষ করেন!

– তাই? বলেন কী!!! বাহিরউদ্দিনের চোখ কপাল ছাড়িয়ে চাঁদিতে ওঠার জোগাড়। সেইসাথে তুমি থেকে আপনিতে সে নিজেই উঠে গেলো।

– তা নগুবের কেজি কতো?

– জিকে! মানুশরা সংশোধন করলো। আমাদের নগুবে আমরা গোরুকে খাওয়াই- মানে রুগোকে খাওয়াই! আপনাদের বেগুনের মতো অতো টেশ না। মুখ চাটলো এক নম্বর মানুশ। 

এই কথার পর বাহিরউদ্দিনের মাথাটা কেমন ঘুরান্টি দিলো। শালা কোনো গ্রহেই শান্তি নাই দেখছি! তার নিজের ক্ষেতেও বাঁধাকপি টমেটো বা মূলার অতিরিক্ত ফলন হলে বা ইন্ডিয়ার আমদানি বাড়ার কারণে বাজারে দাম কমে গেলে, তারা তখন গোরু ছাগলকে খাওয়ায় ঠিকই- কিন্তু এরা তো দেখছি এমনিতেই খাওয়ায়। নাকি তাদের গ্রহে ইন্ডিয়া নেই? জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলবে য়ান্ডিই আছে। বাহিরউদ্দিনের তাই প্রশ্নটা করার সাহস হলোনা। হঠাৎ তার মনে হলো, আরি এরা সব বাঙলায় কথাবার্তা বলছে কেনো? ইংরেজি কি বাদ হয়ে গেলো? আজিবন দেখে আসছে (সিনেমায়) এলিয়েনরা ইংরেজিতে কথা বলে, দাঁত মাজে! সেটা কি মিথ্যা তাহলে? জানা গেলো, এই পৃথিবীর সকল ভাষার মধ্যে নাকি একমাত্র বাংলাটাই ওদের মনে ধরেছে। শুনে বাহিরউদ্দিনের ছাতি চওড়া হয়ে গেলো। সসারটা তার বেগুনক্ষেত নষ্ট করেছে, সেই দুঃখ কিছুটা হলেও কমলো তাতে। পাঁচৈন বগলে চেপে সে লুঙ্গিটা জুৎমতো কাছা দিলো। তাই দেখে দ্বিতীয় মানুশ বললো-

– বাহিরভাই, এই জিনিশটা আমাদেরও পরতে মন্চায় – গিলুং, কিন্তু বেল্ট ছাড়া কোমরে আটকাবো কিভাবে সেটা নিয়ে কনফিউচ!

– না না এইটা পড়ার চেষ্টা না করাই ভালো, ডেঞ্জারাস পোশাক! একটা দুর্ঘটনা- সারাজিবনের কান্না!তাই শুনে মানুশ দুজন খ্যাং খ্যাং করে হাসলো।

– জব্বর হাসাইলেন বাহিরভাই, আমাদের গ্রহের ভিতরউদ্দিনও আপনার মতো রসিক মানুশ! একদিন কী হয়েছে জানেন, ভিতরভাই ‘মঝি’ মেরে, মানে ঝিম্ মেরে বসে আছে, আমরা তাকে জিগাইলাম- ভিতরভাই, কী ভাবেন? সে মাথা নাড়তে নাড়তে বললো, আমি ভাবি…আমি ভাবি… যে আমি কী ভাবি!!! হাহাহা, মজা না?

এর মধ্যে মজা কোথায় বাহিরউদ্দিন ভেবে পেলো না। এই শালার তাড়ছেঁড়াগুলোর সাথে বাহাস করতে গেলে বেলা পড়ে যাবে।

– বাহিরভাই, ঠিকই ধরেছেন, আমার নাম তারছেঁড়া আর ওর নাম তারজোড়া।বাহিরউদ্দিনের পেটের মধ্যে কলজেটা একটা গোত্তা খেয়ে স্থির হয়ে গেলো! এরা তার মনের কথা টের পেলো কিভাবে? 

– এই তোমরা মানুষের মনের কথা টের পাও?

– তা একটু আধটু পাই। শুধু মনের কথাই না, আমরা তোমাদের পেটের কথাও টের পাই

– ক্কিহ?

– জ্যা! এইজন্যইতো তোমাদের প্লানেটে আসা। কথা কিনতে এসেছি আমরা, মানুষের পেটে আর মাথায় দিস্তা দিস্তা কথার আড়ত। আমাদের গ্রহে কথার খুব দাম। ১৭০০ টাকা জিকে!

– স-তে-র-শো? বলো কী?… সরি বলেন কী? বাহিরউদ্দিন আর ভাবতে পারছে না। অথচ তার বেগুন বিকোয় মাত্র সতের টাকা কেজি! 

-ঠিকই বলেছি। তাই সবাই ওজন করে বা মেপে কথা বলে। সবাই সবার কথাও রাখে!

বাহিরউদ্দিনের এবার বিষম খাবার জোগাড়। সামান্য কথার এতো দাম। তাও আবার বিক্রি হয় কেজি দরে? এ কেমন দুনিয়া? সে তাঁরছেড়াকে জিজ্ঞেস করলো,

– তা তোমাদের গ্রহের নাম কী?

– পৃথিবী। তবে আমরা উল্টো করে ডাকি বীথিপি!!! 

 

(চলবে।… তবে না ও চলতে পারে; বীথিপির মানুশদের কথা নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না) 

#অবৈজ্ঞানিক_কল্পকাহিনী

সাম্প্রতিক

কুমীরের মাথার ভেতর হাত ঢোকানোর যে কী শিহরণ- তা শৈশবেই টের পেয়েছিলাম! এই বক্তব্য কিছুটা প্রক্ষিপ্ত- কারণ আদতে তা ছিলো কুমীরের মাথার কঙ্কাল বা খুলি। এবং শহরবাসী হয়েও আমাদের এমন সুযোগ পাবার কথা নয়। কেননা, আমাদের জন্মের বহু আগেই কীর্তনখোলা নদীর কুমীর লোপাট হয়ে গেছে- ছিলো কতগুলো শুশুক। মামাবাড়ী যাবার …

দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে পনের ফুট রাস্তার ব্যবধান- কিন্তু তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাদের বন্ধুত্বে। একজন সাড়ে ছয় অন্যজন পাঁচ। খেলার সিস্টেম হলো দুজন দুজনকে একটা করে খেলনা বেলকনি থেকে অন্যজনকে দেখায়। তাতেই তাদের আনন্দ। বছর তিনেক ধরে চলছে এসব। দুটি পরিবারের মধ্যে সখ্য না থাকলেও তাদের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই। …

মশলা বাটতে বাটতে শিলপাটার ধার একসময় নষ্ট হয়ে যায়- একধরনের পেশাজীবী রয়েছেন, যারা এই পাটা খোটানোর বা ধার করার কাজটা করেন। একটা ছেনি আর হাতুড়ি দিয়ে খুটখুট করে সারা পাটার উপরে নকশার আকারে সুন্দর করে তারা খোদাই করেন। কাজটা দেখতে দারুন লাগতো। কিন্তু খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিলো না- পাথরের …

আলী আশরাফ অশ্রু! নামের ভেতরে যার কান্না লুকানো- সেই লোকটি কিন্তু ছিলেন ভীষণ হাসিখুশি। আমাদের চেয়ে ২/৩ বছরের বড় হবে বড়জোড়- কিন্তু চান্স পেলেই আমাদের মতো পিচ্চিদের কাছে যথেষ্ট মুরুব্বীআনা করতেন তিনি। অত্যন্ত সুশ্রী, গৌরবর্র্ণ, উন্নতনাসার অশ্রুভাইকে দেখলে হিংসা হতো! অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার পরেও তিনি ছিলেন আমাদের …

বয়স পাঁচ বছর ছুঁইছুঁই, সম্ভবত চুহাত্তর সালের দিকে – প্রতি সপ্তাহে আমার উছিলায় শুকনো আপেলের প্যাকেট নিয়ে আসতো মা। সঙ্গে অয়েস্টার মিল্ক গুঁড়োদুধের টিন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে রেড ক্রসসহ বিভিন্ন ক্রিস্চিয়ান অর্গানাইজেশন তখন প্রসূতি মা ও শিশুদের জন্য বাড়তি পুষ্টি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলো। কী যে স্বাদ ছিলো সেই আপেলকুচিতে …

আসল নামটি মফিজুর বটে এলাকার বিগ নেতাপেছনে যতোই ডাকোনা মফিজ তার কানে গেলে সেটাকেটে নেবে কান, জমিন আসমান এক হয়ে যাবে ডড়েমফিজুর ছিলো চাল ব্যবসায়ী-  কার আজ মনে পড়ে? অত্র এলাকা মফিজের হাতে – অবৈধ ঠেক, দোকানচাঁদা দেয় তাকে, টটস্থ থাকে পাতি নেতা, মাস্তান!পাড়ার বেড়াল, বেওয়ারিশ যতো কুকুর, ইঁদুর, ছুঁচুডাকেনা …

ইলিশ আমাদের জাতীয় ফল- একথা শুনেই হইহই করে উঠবেন না। ফল মানে শুধু ফ্রুট নয়, উৎপাদনও বোঝায়। তো আমার হিসেবে আগেকার যুগের কোন একটি আইটেমও যদি স্বাদ গন্ধে এখনো অবিকৃত থেকে থাকে, তো সেটা ইলিশ। বৃদ্ধ বয়ষ্করা অবশ্য একথা মানবেন না, বলবেন “আমাদের আমলের সেই ইলিশ কি আর আছে!” কিন্তু …

ক.খারাপ হবার চান্স পাইনি বলে ভালো… ঝিকাতলা থেকে বারিধারা যেতে, যেভাবেই যাই- কমসে কম একঘন্টা লাগবেই। তার ওপরে আজ সোয়া আটটা বেজে গেছে! নটার অফিস ধরার জন্য ব্যাকুল আমি রাস্তায় বেড়িয়েই বুঝতে পারলাম আজ খবর আছে। মোড়ের কাছে যেখানে সিএনজি অটোরিক্সা চালকবৃন্দ নেহাৎ খোশগল্প করার জন্য ওৎ পেতে থাকে- আজ …

বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটি পরিচালিত মল-অপসারণের গাড়িগুলির কথা বললে একালে কেউ বিশ্বাস করবে কিনা সন্দেহ। আফসোস হচ্ছে- অনেক চেষ্টা করেও অমন একটি গাড়ির ছবি আমি জোগাড় করতে পারিনি। স্থানীয় মেথরবাড়ীতে সেগুলো থাকতো। একটা দশাসই ড্রামের পেটের কাছে মুখ-কাটা, আর আড়ভাবে জুড়ে দেয়া গরুর গাড়ীর সাথে। এর সঙ্গে থাকতো অদ্ভুত আকারের একটা বালতি। …

লক্কর-ঝক্কর ট্রাকটা এসে ল্যান্ড করলো ঠিক আমাদের দাড়িয়াবান্ধা আর ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্টের উপরেই। শালা আর জায়গা পেলোনা। কিন্তু যাবেই বা কোথায়? পাবলিক স্কুলের পুরো মাঠটাতেই তো একহাঁটু প্যাঁচপেচে কাদা। ওখানে নামার প্রশ্নই আসে না। আমরা ভাবছিলাম হয়তো মাল আনলোড করেই ওটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যাবে। কিন্তু ট্রাকটা তো খালি! …